কয়েকটি রাশিয়ান ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে নিষিদ্ধ করা হলেও রাশিয়ার সহায়তায় নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়মিত কাজ ব্যাহত হবে না।
শনিবার থেকে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এর একদিন পর সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রথমবারের মতো আকাশপথে রূপপুরে ভারী যন্ত্রপাতি পাঠিয়েছে রাশিয়া।
রোববার ৮৪ টন কার্গো অফলোড করার জন্য একটি বিশেষ কার্গো ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
সূত্র জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়া আকাশপথে সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। তবু সুইফট সিস্টেম থেকে দেশটির ব্যাংকগুলোকে বাদ দেওয়ায় কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
রাশিয়ার যেসব ব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে সেগুলোর একটি হলো ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (ভিইবি)। ভিইবি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়নে রাশিয়া প্রান্তের এজেন্ট। তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক এ প্রকল্পের অর্থ লেনদেন করে।
এছাড়াও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাশিয়ায় টাকা পাঠানো হয় বলে সাধারণ ঠিকাদার জেএসসি অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের আওতাধীন সাব-কন্ট্রাক্টর এবং স্থানীয় ও রাশিয়ান শ্রমিকদের অর্থপ্রদানে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছে যে প্ল্যান্টে প্রতিদিনের কাজের সাথে নিষেধাজ্ঞার কোনো সম্পর্ক নেই।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত আকবর বলেন, 'প্রকল্পের অর্থ সরাসরি রাশিয়া থেকে আসে না, ওরা কেবল কিছু নথি অনুমোদন করে।'
রাশিয়ার ঋণ সহায়তা আসছে না বাংলাদেশে
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট (মেগাওয়াট) উৎপাদনক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি ২০২৪ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার কথা রয়েছে।
মোট খরচের ৯০ শতাংশ ঋণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। বাকি ১০ শতাংশ অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া যে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে তা প্রকল্পের যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যয় করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশ সরকার যে অর্থ দিচ্ছে, তা ব্যয় হচ্ছে রাশিয়ান প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, নির্মাণ শ্রমিক ও স্থানীয় শ্রমিকদের বেতনভাতায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অন্যান্য প্রকল্পের মতো রূপপুরের ঋণ সহায়তাও বাংলাদেশে আসেনি। ফলে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে এ অর্থ দেওয়া যাচ্ছে না।
গত সপ্তাহে 'এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার' ম্যাগাজিন কর্তৃক আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় আনোয়ার হোসেন বলেন, দুপক্ষের প্রকল্প পরিচালকরা কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। তারপর সাধারণ ঠিকাদার জেএসসি অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের বিল ছাড়ের জন্য সেগুলো পাঠানো হচ্ছে রাশিয়ান ভিইবি ব্যাংকের কাছে।
এরপর বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সেসব কাগজপত্রের বিপরীতে খরচের একটি নথি পায়।
এ কারণে সুইফট নিষেধাজ্ঞার জন্য অর্থায়নের এই অংশে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেন আনোয়ার হোসেন।
রাশিয়ায় অর্থ পাঠানো নিয়ে উদ্বেগ
বাংলাদেশ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সাধারণ ঠিকাদার জেএসসি অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টকে টাকা পাঠাত। অর্থের একটি অংশ রূপপুর প্রকল্প সাইটে কর্মরত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সাব-কন্ট্রাক্টরদের বিল আকারে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম ত্রৈমাসিকের অর্থ ইতিমধ্যেই জানুয়ারিতে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাঠানোর কথা ছিল।
ওই কর্মকর্তারা বলেন, সুইফটের নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘদিন বলবত থাকলে সাধারণ ঠিকাদারের মাধ্যমে সাব-কন্ট্রাক্টরদের কাছে অর্থ পাঠানো বাধাগ্রস্ত হবে।
আনোয়ার হোসেন মনে করেন, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একসঙ্গে বসলে রাশিয়ায় অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, '১৯৭৩ সালে চালু হওয়া সুইফট ছাড়াও ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। সুইফট ছাড়াও আরও কিছু আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উপায়ে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে, যা আমরা ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং মায়ানমারে দেখেছি।'
সূত্র: টিবিএস