২০১০ সালের ৪ জুলাই জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে, দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং ওটিসিতে থাকা কোম্পানির ক্ষেত্রে তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার এক মাসের মধ্যে ইজিএম আহ্বান করে কারখানা বন্ধের কারণ, উৎপাদন শুরুর সম্ভাব্য তারিখ এবং কোম্পানির পরিচালনগত কার্যক্রম নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়টি শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে। পাশাপাশি ইজিএমের নোটিস এবং ইজিএমে নেয়া সিদ্ধান্ত বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে।
চলতি মূলধন সংকটের কারণে এ বছরের অক্টোবর থেকেই কারখানা বন্ধ রয়েছে বিবিধ খাতের কোম্পানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। কোম্পানির পর্ষদ বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই কারখানা চালু করা সম্ভব হবে বলে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানায় কোম্পানিটি। অক্টোবরে কারখানা বন্ধ হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই মূল্যসংবেদনশীল তথ্যটি ২ মাস পর প্রকাশ করে কোম্পানিটি। এ বিষয়ে এরই মধ্যে বিএসইসি কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে।
জানতে চাইলে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব দেওয়ান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, কারখানা বন্ধের বিষয়টি ইজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে এ ধরনের কোনো নির্দেশনার বিষয়ে আমরা অবগত নই। তাছাড়া কারখানা বন্ধের বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সেখানেও এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
এদিকে চলতি বছরের ২৫ জুন থেকে আলহাজ টেক্সটাইলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রথম দফায় ৩০ দিনের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি। এক মাসেও বিক্রিতে কোনো ধরনের অগ্রগতি না হওয়ায় ৮ আগস্ট পর্যন্ত আরো ১৫ দিনের জন্য কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে বর্ধিত মেয়াদ শেষেও কোম্পানিটির উৎপাদিত মজুদ সুতা অবিক্রীত থাকায় পরবর্তী সময়ে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আরো ১৫ দিনের জন্য কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়ায় কোম্পানিটি। এর পরও সুতা বিক্রিতে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তৃতীয় দফায় ২৪ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর, চতুর্থ দফায় ৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ও পঞ্চম দফায় ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় আলহাজ টেক্সটাইল। এরপর ৮ অক্টোবর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি। ছয় মাসের বেশি সময় উৎপাদনে না থাকায় সম্প্রতি আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের শেয়ারকে বিদ্যমান ‘এ’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করেছে ডিএসই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (সেটলমেন্ট অব ট্রানজেকশন) রেগুলেশনস, ২০১৩ অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আলহাজ টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. শওকত আলী বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালন না করেই কারখানা বন্ধের বিষয়ে বলেন, এ ধরনের নির্দেশনার বিষয়টি আমার জানা নেই।
বিএসইসির নির্দেশনা অমান্য করে কারখানা বন্ধের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আলহাজ টেক্সটাইল ও মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে কারখানা বন্ধের ক্ষেত্রে যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় সেগুলো পরিপালন করেনি। এ বিষয়ে আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, শুধু আলহাজ টেক্সটাইল কিংবা মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজই নয়, নিকট অতীতে আরো যেসব কোম্পানি তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে, তারা কেউই ইজিএম আহ্বান করে শেয়ারহোল্ডারদের এ বিষয়ে অবহিত করেনি। ফলে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কমিশনের নির্দেশনা প্রতিনিয়তই লঙ্ঘন করছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো।র