করোনাকালেও শক্ত অবস্থানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

করোনাকালেও শক্ত অবস্থানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
করোনার কারণে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশ এখন কাবু। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে। বিশেষ করে প্রবাসীদের পাঠানো আয় এখনও বাংলাদেশকে আশার আলো দেখাচ্ছে। এর প্রমাণ মেলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তথ্যে। চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ তিন হাজার ৩০০ কোটি (৩৩ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল রিজার্ভ বেড়ে ৩৩ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একদিকে আমদানি ব্যয়ের চাপ কমে এসেছে, অন্যদিকে প্রবাসী আয় এখনও আসছে। এছাড়া, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকার বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও বিশ্ব সংস্থার অনুদানের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। যদিও রফতানি বাণিজ্যের অবস্থা একেবারেই নাজুক। এর আগে গত ৩ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ হাজার ৩০৯ কোটি (৩৩.০৯ বিলিয়ন) ডলার উচ্চতায় উঠলেও গত ৪ মার্চ ফের নেমে আসে ৩২ বিলিয়নে। ৮ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২১৫ কোটি (৩২.১৫ বিলিয়ন) ডলার।

সাধারণত, রফতানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে রিজার্ভ বাড়ে। তবে গত কয়েক মাস ধরে রফতানিতে শোচনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৭ সালের জুনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার রিজার্ভ অতিক্রম করেছিল। এরপর দীর্ঘদিন ৩১ থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করেছে রিজার্ভ।

তবে বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণের দায় ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় শোধ করলে এ রিজার্ভ আবারও কমে যাবে বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। একক মাস হিসেবে মার্চে রফতানি আয় হয়েছে ২৭৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ কম।

এদিকে বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপের মধ্যেও দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা আয় (রেমিট্যান্স) পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন। সারাদেশের ব্যাংক শাখা১ এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও এনজিওদের মাধ্যমে তা পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে। চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১৬ দিনে প্রবাসীরা ৪৪ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় পাঠিয়েছেন, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। গত মার্চ মাসের পুরো সময়ে এসেছিল ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার।

জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো সূচক ছিল প্রবাসী আয়। করোনার কারণে এই আয় কমে গেছে। প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলো ভাইরাসে নাস্তানাবুদ, দীর্ঘদিন ধরে চলছে লকডাউন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাসে বৈদেশিক আয় এসেছিল ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। গত বছরের (২০১৯) মার্চ মাসে এসেছিল ১৪৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। ফলে এবছরের গত মার্চেই আয় কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে ১৪৫ কোটি ডলারের আয় এসেছিল। গত ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার। জানুয়ারিতে আসে ১৬৪ কোটি ডলার।

প্রসঙ্গত, বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। সেই অনুযায়ী, গত ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এজন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, যে কারণে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়।

জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত কেবল বিকাশের মাধ্যমে ১৩৮ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য থেকে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাব
জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা
এনসিপিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক নিতে চিঠি দেবে ইসি
তিন দেশ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার
মন্দিরে দায়িত্বরত পুলিশের গুলি চুরি, ওসিসহ ৮ জন প্রত্যাহার
শর্ত পূরণ করেছে এনসিপিসহ দুটি দল: ইসি
স্ত্রীসহ সাবেক এমপি আলী আজমের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক
৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি বেড়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
দুর্গাপূজার ছুটিতে শুল্ক স্টেশনে চালু থাকবে আমদানি-রপ্তানি
ফ্যাসিস্ট শক্তি মোকাবিলা করা বড় চ্যালেঞ্জ: আইজিপি