এছাড়া প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে উভয়দেশ। অনেক সময় ভিসা জটিলতার কারণে ভারতীয় পরামর্শক প্রকল্প এলাকায় আসতে নানা ধরণের সমস্যা হয়। এ সমস্যা নিরসনে প্রকল্পগুলোর সঙ্গে জড়িতদের অনুকূলে ভিসা দেওয়ার পদ্ধতি সহজীকরণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সোমবার (২৮ মার্চ) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
জানা যায়, রোববার (২৭ মার্চ) ভারতীয় নমনীয় ঋণের (এলওসি) আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলো পর্যালোচনার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ পর্যায়ের প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভিসা সহজীকরণের বিষয়টি ওঠে আসে।
সভায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। এসময় সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ভারতীয় পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন ও এক্সিম ব্যাংক ভারতের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের জন্য ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করা হয়। এছাড়া দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তুতকরণ, দরপত্রের শর্তাবলী যৌক্তিকীকরণ, অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দ্রুততম সময়ে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন এবং প্রকল্পগুলোর সঙ্গে জড়িতদের অনুকূলে ভিসা দেওয়ার পদ্ধতি সহজীকরণসহ এলওসি'র অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আলোচিত হয়। এসব বিষয়গুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করলে প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ দ্রুত ছাড় হবে বলে আশা করেন সংশ্লিষ্টরা। ঋণ দ্রুত ছাড় হলে প্রকল্পে গতিও পাবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ভারতীয় নমনীয় ঋণের আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর পদ্ধতিগত বিভিন্ন বিষয় ও প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণে যে সেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এ দ্বিপাক্ষিক কমিটির সভা অন্যতম। সভায় উভয়পক্ষ গত ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির প্রথম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে।
এলওসির কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ-ভারতের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী। এ কর্মসূচির আওতায় ভারত মোট ৭ দশমিক ৮৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন সহযোগিতা দেওয়া প্রতিশ্রুতি দেয়। এলওসি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হওয়ায় উভয়পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে। লক্ষ্যণীয় যে, কোভিড -১৯ অতিমারির মারাত্বক প্রভাব সত্ত্বেও যৌথ প্রচেষ্টার ফলে গত প্রায় ১ বছর সময়ে ২৩৮ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থছাড় হওয়ায় অর্থছাড়ের গতি প্রায় দ্বিগুন হয়েছে ।
ভারতীয় এলওসিভুক্ত (লাইন অব ক্রেডিট) প্রকল্পে মোট ঋণছাড় হয়েছে ৯৬ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার সমান ৮৬ টাকা ধরলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। তিনটা এলওসি মিলে এই ঋণ ছাড় করেছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ ভারত।
শুরুর দিকে ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের পরিমাণ হতাশাজনক থাকলেও বর্তমানে তা বেড়েছে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। প্রথম ধাপে ২০১০ সালে দেওয়া এলওসি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি ডলার।
এরই মধ্যে ভারত প্রকল্পের আওতায় অর্থছাড় করেছে ৬৮ দশমিক ৬ কোটি ডলার বা ৭৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। প্রথম এলওসিতে অর্থছাড় বাকি আছে মাত্র ১২ কোটি ডলার। প্রথম এলওসির আওতায় ১৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ১২ প্রকল্প শেষ হয়েছে। বাকি তিন প্রকল্প চলমান। ২০২১-২২ অর্থবছরে একটি প্রকল্প বাদে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় এলওসি ২০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সই করেছে ভারত। এর মধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ১৭ দশমিক ২৬ কোটি ডলার। ভারতের সাবেক অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলির সফরে তৃতীয় ধাপের লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় আরও ৪৫০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সই হয়েছিল। এর মধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ১০ দশমিক ১৩ কোটি ডলার। তিন ধাপে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)। এর মধ্যে ছাড় হয়েছে ৯৬ কোটি ডলার।