মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে সোমবার (১১ এপ্রিল) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরা থেকে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জিয়াউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ৬ বোতল বিদেশি মদ, ৯৯ হাজার টাকার জাল নোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোশান সিরামিক প্ল্যান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যত পরিকল্পনা, ওমানে অর্থ পাচারের তথ্য, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য জাপানে তৈরি স্টিকার, ৫ ধরনের আইডি এবং বিজনেস কার্ড, নগদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ২০০ কোটি টাকা নেওয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করা হয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার জিয়াউদ্দীন ১২টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অর্থাৎ চেয়ারম্যান বা এমডি হিসেবে দাবি করে থাকেন। তিনি নিজেকে জাহির করার লক্ষ্যে এ ধরনের তথ্য সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড তৈরি করেছেন। এছাড়াও তার অস্ট্রেলিয়া, চায়না, হংকং, ওমান ও দুবাই এ নানাবিধ ব্যবসা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে ভুয়া প্রচারণা চালান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জিয়াউদ্দীন ২০১৪ সালে ফোশান সিরামিক লিমিটেড স্যানিটারি প্যাড, হাইলেডি স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ নানাবিধ পণ্যের আকর্ষণীয় টিভিসির মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে প্রতারিত করতেন। ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের কাছে কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এইভাবে ব্যবসায়িক অংশীদারের প্রস্তাব দিয়ে সে আনুমানিক শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। মূলত ভুয়া আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, ভুয়া কোম্পানি ওয়েবসাইট, বিদেশে ভুয়া ফ্যাক্টরি এবং অফিস পরিদর্শন, সাজানো বিপণন কেন্দ্র এবং ভুয়া কৃষি খামার ইত্যাদিতে আকৃষ্ট হয়ে জিয়াউদ্দীনকে সরলভাবে বিশ্বাস করে ব্যবসায়ীরা তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হন।
জিয়াউদ্দীন ২০০৯ সালে প্রবাসে থাকা অবস্থায় টাইলস ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেন। এছাড়া বিদেশি দুটি দেশের মাফিয়াদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করেন। এভাবে অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। পরে ২০১৪ সাল থেকে ফোশান সিরামিক লিমিটেড, হাইটেক সিরামিক লিমিটেড ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে বেশি মূল্য দেখিয়ে তিনি বিদেশে অর্থ পাচার করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, জিয়াউদ্দীন প্রতারণার কৌশল হিসেবে ব্যবসায়ীদের দামী এবং আকর্ষণীয় গিফট দিতেন। পরে তাদের বিদেশে তার তথাকথিত টাইলস ফ্যাক্টরিতে ভ্রমণের ব্যবস্থা করতেন। বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে কয়েকশ একর জমি লিজ নিয়ে সেটিকে নিজস্ব সম্পত্তি বলে প্রচার করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, জিয়াউদ্দীন ৪টি ব্র্যান্ডের সিরামিকস বা টয়লেট সামগ্রীর ব্যবসার আড়ালে বিভিন্নভাবে মানুষদের প্রতারিত করতেন। প্রতারণার অর্থ দিয়ে প্রায় ১৩০ বিঘা জমি কেনেন। যার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় তিনশত কোটি টাকা ঋণ নেন। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি অ্যাকাউন্ট ও বিদেশে ৩টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার নামে। এছাড়া তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৬০ থেকে ৭০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৮ থেকে ২০টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।