বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’ এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক কয়েকটি কারণে ঋণের সুদ মওকুফ করতে পারে। ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদী ভাঙন, দুর্দশাজনিত কারণে বা বন্ধ প্রকল্প ইত্যাদি কারণে ব্যাংক কর্তৃক ঋণের সুদের সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ মওকুফ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, বর্ণিত বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংক বিভিন্ন গ্রাহকের সুদ মওকুফ করে দিচ্ছে। এতে করে সুদ মওকুফ সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে, যা ব্যাংকিং খাতে সার্বিক ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
এমন পরিস্থিতিতে সামগ্রিক ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরোপিত, অনারোপিতসহ সব ধরনের সুদ বা মুনাফা মওকুফের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
- মূল ঋণ (আসল) মওকুফ করা যাবে না।
- জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণ এর সুদ মওকুফ করা যাবে না।
- ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করা যাবে না।
- ঋণের সুদ মওকুফ সুবিধা ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদে অনুমোদিত নিতে হবে। তবে, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে সুদ মওকুফের বিষয় সিদ্ধান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিতে পারবে।
- সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় আদায় নিশ্চিত করতে হবে।
তবে যেসব ক্ষেত্রে তহবিল ব্যয় আদায় সংক্রান্ত শর্ত শিথিল করা যাবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসবের মধ্যে রয়েছে, তিন বছর বন্ধ রয়েছে এমন প্রকল্পে তহবিল ব্যয় আদায় শর্ত শিথিল করা যাবে। ঋণের জামানত, সহজামানত, প্রকল্প সম্পত্তি এবং প্রকল্প উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রয় হতেও তহবিল ব্যয় আদায় করা সম্ভবপর নয় এমন প্রকল্পের ক্ষেত্রে তহবিল ব্যয় আদায় করতে হবে না।
পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে আইনগত ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরও পাওনা আদায় করা না গেলে এবং ঋণগ্রহীতার মৃত্যু অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদী ভাঙন বা দুর্দশাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা যৌক্তিক কারণে ঋণ পরিশোধে অপারগ হলে তহবিল ব্যয় আদায় করতে হবে না।
সুদ মওকুফ করা হলে ব্যাংকের নিজস্ব আর্থিক অবস্থার ওপর কীরূপ প্রভাব পড়বে তা পর্যালোচনা করতে বরা হয়েছে নতুন সার্কুলারে। এছাড়া, কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, এবং তার পরিবারের সদস্যদের বা পরিচালকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
তবে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে এ সার্কুলারে বর্ণিত নির্দেশনাসহ সরকারের দেওয়া সময়ে সময়ে জারি করার নির্দেশনা পরিপালন করতে হবে। এ নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।