সেখান থেকে ঋণ নিতে আবেদন করেছেন ২ হাজার ২০০ কারখানার মালিক। এরমধ্যে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫টি; বিকেএমইএভুক্ত ৫৫০টি।
বাকি ৩৫টি ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত পোশাক কারখানা। ৪৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে এই কারখানাগুলোর মালিকদের ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ঋণ পেতে আবেদন জমা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। আবেদনের বিপরীতে ইতোমধ্যেই ২ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা যায়, ৪৬টি ব্যাংকের ৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকার মধ্যে ৫৪০ কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। ১২২টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি দিতে এই টাকার আবেদন করেছে ব্যাংকটি। সাউথইস্ট ব্যাংক ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য ৪৪০ কোটি টাকা চেয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও দেখা দেওয়ার পর এর বিস্তার রোধের পদক্ষেপে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ায় গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্প বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করে।
নীতিমালায় বলা হয়, যেসব কারখানা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করছেন, তারাই এই তহবিলের অর্থ পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে। এই তহবিল থেকে ২ শতাংশ সুদে দুই বছরের জন্য ঋণ দেওয়া হবে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোকে। এই ঋণের অর্থ জোগাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সেজন্য ব্যাংকগুলোকে অর্থও জোগাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই তহবিল থেকে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ নেওয়া যাবে। ব্যাংকগুলো ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক অথবা মোবাইল ব্যাংক হিসাবে সরাসরি দেবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো প্রকার নগদ লেনদেন করা যাবে না এবং শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক হিসাব ব্যতীত অন্য কোনোভাবে লেনদেন করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২ মে ছিল আবেদনের শেষ দিন। সেই সময় পর্যন্ত মোট ২ হাজার ২০০টি আবেদন জমা পড়ে। যার বিপরীতে টাকার অঙ্কে দাবি করা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ২০০ হাজার কোটি টাকা ছাড়া করা হয়েছে। বাকিটা দু-একদিনের মধ্যেই ছাড় করা হবে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সচিব মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, তাদের সংগঠনভুক্ত ১ হাজার ৬১৫ জন কারখানা মালিক প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ দিতে আবেদন করেছেন। এই মুহূর্তে বলা যাবে না। হিসাব করে বের করতে হবে। নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, আমাদের বিকেএমইএ থেকে ৫৫০ জনের মতো আবেদন করেছেন।
অনুপস্থিত পোশাক শ্রমিকরা এপ্রিলের বেতন পাবেন ৬৫ শতাংশ: এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সরকারের সাধারণ ছুটির সময় এপ্রিল মাসে যেসব কারখানা বন্ধ ছিল বা ওই সময় যেসব শ্রমিক কারখানায় কাজ করেননি ওইসব কারখানার শ্রমিকদের মজুরি আরও পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করা হয়েছে। সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে এপ্রিলের মজুরি হিসেবে শ্রমিকরা বেতনের ৬০ শতাংশ পাবেন-এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে। কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আরও পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করা হয়েছে। এপ্রিলের মজুরির হিসাব চূড়ান্ত হওয়ায় বর্ধিত মজুরির পাঁচ শতাংশ শ্রমিকরা মে মাসের মজুরির সঙ্গে পাবেন।
সভায় সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী সংসদ সদস্য শাহজাহান খান, বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বিকেএমইএর সভাপতি এবং সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম, তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক।
নিট পোশাক তৈরি ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ, আমিরুল হক আমিন, নাজমা আক্তার, বাবুল আখতার এবং শহীদুল্ল্যাহ শহীদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। ঈদের আগে শ্রমিকদের উৎসব বোনাস নিয়ে আগামী সপ্তাহে সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।