মেডিক্যাল সরঞ্জাম উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারীরা বলছেন, যে ধরনের মাস্ক দিয়ে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষুদ্র জীবাণু প্রতিরোধ করা যায় সেটাই হলো এন৯৫ মাস্ক। মূলত ভাইরাস নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা এই মাস্কের মূল ব্যবহারকারী। বিশ্বে খুবই স্বল্প পরিচিতি থাকা এই পণ্য করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে রাতারাতি চলে এসেছে মানুষের মুখে মুখে।
সারাবছর চাহিদা কম থাকায় মাত্র কয়েকটি দেশে পণ্যটির উৎপাদন হয়। উৎপাদনকারী দেশের গাইডলাইন অনুযায়ী হয় পণ্যের নামকরণ। যুক্তরাষ্ট্রে যে মানের মাস্কের নাম এন৯৫, চীনে সেটি কেএন৯৫। ইউরোপ, জাপান ও কোরিয়ায় এটি এফএফপি-২, ডিএস৯৫ ও কে৯৫ নামে পরিচিত।
বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে এ ধরনের মাস্কের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিজেদের গাইডলাইন না থাকা বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গাইডলাইন মেনে শুরু হয়েছে এন৯৫ মানের মাস্কের উৎপাদন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পণ্যটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে জেএমআই গ্রুপ। যৌথ বিনিয়োগে আছে চীনা পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিজ ফ্যাশন। উভয়ে মিলে জেএমআই রেসপাইরেটর নামে চীনের গাইডলাইন জিবি২৬২৬-২০০৬ অনুযায়ী উৎপাদন করছে কেএন৯৫-এর সমমানের পণ্য। প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা জানান, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গেলে দিনে প্রায় ৪০ হাজার পিস মাস্ক উৎপাদন হবে তাদের কারখানায়।
সরকারের অনুমতি পাওয়ার পর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক। আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ২১ বছর ধরে চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনের ব্যবসায় যুক্ত। আমরাই প্রথম এদেশে ট্রেডিং-এর বাইরে এসে ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করি এই খাতে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদলে এদেশের চিকিৎসকদের জন্য বহু চিকিৎসা সরঞ্জাম উন্নয়ন ও গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করে দিয়েছি। এগুলো পরে আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে মানসম্মত প্রমাণ হওয়ার পর বিদেশে রফতানি করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা চীনের গাইডলাইন মেনে দেশে কেএন৯৫ মানের মাস্ক বানানো শুরু করেছি। আমাদের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষ। আমাদের উৎপদিত পণ্য ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদিত ল্যাবে পরীক্ষার জন্য জমা দিয়েছি। এরপর আরও কিছু পরীক্ষা লাগবে। এরপরই আমরা গর্বের সঙ্গে ঘোষণা দিতে পারবো, বাংলাদেশ কেএন৯৫ মাস্ক বানিয়েছে।’
কারখানায় তৈরি হচ্ছে কেএন ৯৫ মানের মাস্ক কেএন৯৫ মানের মাস্ক উৎপাদনে জেএমআই-এর সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ থাকা প্রতিষ্ঠান লিজ ফ্যাশনের কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ম্যানেজার শার্লি ইউয়ান জানান, মানের বিষয়ে কোনও ছাড় দিচ্ছেন না তারা। তার দাবি, ‘আমাদের তৈরি মাস্কে পাঁচ স্তরের সুরক্ষা থাকছে, যার মধ্যে রয়েছে তিন স্তরের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ফিল্টার পেপার। এই কারখানায় দিনে অন্তত ৪০ হাজার পিস মাস্ক উৎপাদন সম্ভব। আমরা এখন টেস্ট রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।’
আমদানি করা চীনা কেএন৯৫ মাস্ক এখন দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকায়। একই মানের মাস্ক উৎপাদন করছে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন জানান, চীনের কেএন৯৫ মাস্কের সমমানের একটি মাস্ক তারা বানাতে পারছেন মাত্র ১৫০ টাকায়।
এদিকে দেশে উৎপাদিত মাস্ক ও পিপিই’র মান পরীক্ষার জন্য পাঁচটি বেসরকারি পরীক্ষাগারকে দায়িত্ব দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। তবে উৎপাদিত মাস্ক কেএন৯৫ মানের কিনা তা প্রমাণে এসব পরীক্ষাগার যথেষ্ট নয়। তাই কোনও প্রতিষ্ঠান যদি এন৯৫-এর সমমানের মাস্ক উৎপাদনের দাবি করে তাহলে তাদের দেশীয় পরীক্ষাগারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে মান পরীক্ষা করাতে হবে।
কেএন ৯৫ মানের মাস্ক তৈরির কারখানাওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক ও মুখপাত্র রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এন৯৫ বা কেএন৯৫, যে মানের মাস্কই দেশে উৎপাদন করা হোক না কেন; এজন্য যত টেস্ট দরকার সবই আমাদের সার্টিফাইড ল্যাব অথবা আন্তর্জাতিকভাবে টেস্ট করিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, এটা ওই মান বজায় রাখছে। এরপর আমরা তাদের টেস্ট রিপোর্টগুলো যাচাই করবো। অনুমোদিত পরীক্ষাগারে মাস্ক পরীক্ষার পর প্রতিষ্ঠানটির কারখানা পরিদর্শন করবে কর্তৃপক্ষ। সবকিছু সন্তোষজনক হলে পণ্য বাজারজাতকরণের অনুমতি দেওয়া হবে। তখনই একটি প্রতিষ্ঠান এন৯৫ অথবা কেএন৯৫-এর সমমানের মাস্ক তৈরি করতে পারার ঘোষণা দিতে পারবে।’
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের এই কর্মকর্তা আরও জানান, মান যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষার খরচ বহন করতে হবে মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে।