শনিবার (১৮ জুন) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ সম্পর্কিত রিহ্যাবের প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এসব তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল, রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইন্তেখাবুল হামিদ, সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ, সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল, লায়ন শরীফ আলী খান এবং প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের নেতারা জানান, বাংলাদেশের গৃহায়ণ শিল্প প্রতি বছর প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহে কার্যকর ভূমিকা রাখছিল। রিহ্যাব সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসনের মালিকানা সহজলভ্য করে মানুষের মনে আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি করছে। এছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণখাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সঙ্গে ৪০ লাখ শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল দুই কোটি মানুষের অন্নের জোগান দিচ্ছে। সৃষ্টি করছে নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের, যা প্রকারান্তরে দেশের উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।
অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি সরকারি অর্থনৈতিক ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বলেছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ উৎপাদনের জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থাটাই দায়ী। হঠাৎ করে বা রাতারাতি সিস্টেম পরিবর্তন করা সম্ভব না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে নিবন্ধন ব্যয় ১২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২-৩ শতাংশে নিয়ে এসে ধীরে ধীরে সিস্টেম পরিবর্তন করলে তবেই সঠিক মূল্যে রেজিস্ট্রেশন হবে এবং সার্বিক অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ বলে গণ্য করা যাবে। ঘোষিত বাজেটে পাচারকৃত টাকা দেশে আনার বিষয়ে আইন করা হয়েছে, এটি সাহসী পদক্ষেপ কিন্তু দেশ থেকে যাতে টাকা পাচার না হয় সেদিকেই আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। বিনা প্রশ্নে উত্তম বিনিয়োগের সুযোগ ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে নির্দেশিত নির্দেশনার আদলে এখন বাস্তবসম্মত ও সময় উপযোগী।
এসময় রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, আমরা অন্তত দুই/তিন বছরের জন্য অপ্রদর্শিত টাকা আবাসনখাতে বিনিয়োগের সুযোগ চাই। এতে এই দু/তিন বছরের প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা করে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। এতে দেশ থেকে কোনো টাকা পাচার হবে না। আবাসন খাতে বিনিয়োগ হলে এ খাত যেমন ঘুরে দাঁড়াবে, একই সঙ্গে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। সরকার নির্মাণশিল্প থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। যদি আবাসন সেক্টরসহ উৎপাদনমূখী খাতগুলো গতিশীল থাকে, তবে বাজেটে যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে তা সম্ভব হবে। অর্থনীতি হবে আরও সমৃদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আমাদের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের একান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এ খাত সম্প্রতি নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। উদীয়মান এই খাতে নানা কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসনখাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পতিত হয়েছে। কোভিড মহামারির ধাক্কা, নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে মাসিক কিস্তি সুবিধা দেওয়ার মতো এই খাতে পর্যাপ্ত আর্থিক ঋণ প্রবাহ না থাকায় অনেকের বাসস্থানের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। নতুন করে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের অনাপত্তি সনদ।
রিহ্যাব নেতারা বলেন, এরই মধ্যে ঢাকার এক কাউন্সিলর নোটিশ দিয়েছেন, তার অনুমতি ছাড়া ভবন নির্মাণ করা যাবে না। আমরা কয়টা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সনদ গ্রহণ করবো? একের পর এক সমস্যা এই শিল্পকে সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সংকট উত্তরণ অসম্ভব। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে সমগ্র গৃহায়ণখাতে বিক্রির পরিমাণ প্রায় হ্রাস পেয়েছে। এই মুহূর্তে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে দেশের অর্থনীতিতে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমাদের শঙ্কা।