রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমেরিকা রাশিয়ার ওপর ডলার আদান-প্রদানে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এতে শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক উন্নত দেশও ভুক্তভোগী।
তিনি বলেন, এই একটা সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের সার কেনা, খাদ্য কেনা অথবা জ্বালানি তেল কেনা, সব ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু আমরা নই, সারা বিশ্বই একটা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে। এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সবাই ভোগ করছে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে যেমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, ঠিক একইভাবে উন্নত দেশগুলোতে অনেক অনেক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামও।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। আমি উন্নত দেশগুলোর কথা বেশি বলব। কারণ আমরা তো অনেক দূরে রয়ে গেছি কিন্তু তাদের অবস্থাই হচ্ছে করুণ। সেখানে আমরা কোথায়। তারপরও বলব প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সবাই স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করছে বলেই আমরা এখনও ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। তবুও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমাদের সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হতে হবে। অহেতুক অপচয় যাতে না হয়, সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি এ ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকা নানা কথা লিখবে। টকশোতে অনেক কথা বলবে। বিরোধী দলও কথা বলবে। এটা বলাই তাদের কর্তব্য। তারা বলে যাক। আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং দেখতেহবে আমরা সঠিক পথে আছি কি না, সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করছি কি না, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি কি না, দেশের সাধারণ মানুষ সঠিক সেবা পাচ্ছে কি না? আমরা যদি সেভাবে চিন্তা করি, তাহলে কে কী বলছে, সেদিকে খুব বেশি নজর দিতে হবে না।
তিনি বলেন, কে কী বলল সেটা শুনে হয়ত দেখতে পারি কোথাও আমাদের কোনো ঘাটতি আছে কি না। ওইটুকু আমরা নেব। কিন্তু ওই কথায় যেন বিভ্রান্ত না হন, কেউ যেন হতাশ না হন। এটুকু বলব। কেউ যেন হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়েন সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যখন যে অবস্থা হবে, সেই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। তারপরও আমাদের নিজেদের যা কিছু আছে, তা নিয়ে চলব।
সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময়েও দেশের অর্থনৈতিক গতি ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে। এটা ঠিক আজ বিশ্বের কোনো দেশ এককভাবে চলতে পারে না। বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। একে অপরের ওপর আমরা অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল।
দেশের মানবসম্পদ ও মাটি কাজে লাগাতে পারলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, জনগণের অর্জিত অর্থ দিয়ে সবার বেতন-ভাতা, আরাম, আয়েশ সবকিছু। তাই কাজ করতে হবে তাদের জন্য, তাদের স্বার্থে এবং কল্যাণে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এজন্য বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, ফ্ল্যাট, জমি ও গাড়ি সুবিধাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, আপনাদের সংসারের চিন্তা অনেকটা লাঘব করে দিয়ে জনগণের চিন্তা যাতে করতে পারেন, সেই সুযোগটা যাতে সৃষ্টি হয়, সেই ব্যবস্থাও আমি নিয়েছি। বিস্তারিত এই ব্যাপারে বলতে চাই না।
শেখ হাসিনা বলেন, যাদের দিয়ে জনগণের দায়িত্ব পালন করাব, তারা যেন মন-প্রাণ ঢেলে জনগণের সেবা করতে পারে। সেভাবে কাজ করেছি। প্রত্যেকটা কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্মসম্পাদন চুক্তি করা হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
তৃণমূলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির মূল লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।