এর আগে মহামারি মোকাবিলায় নিজ সংস্থার ভূমিকা পর্যালোচনায় সম্মত হয়েছেন ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সম্ভাব্য আগাম সুযোগেই একটি স্বাধীন মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পর্যালোচনায় রাজি হয়েছেন তিনি।
সোমবার ডব্লিউএইচও’র ১৯৪টি সদস্য দেশ নিয়ে শুরু হয়েছে দুই দিনের বার্ষিক বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশন (ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি)। করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে সংস্থাটির ভূমিকা পর্যালোচনায় ভার্চুয়াল বৈঠকের মধ্য দিয়ে এবারের ৭৩তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এবছরের শেষ নাগাদ পুনর্নির্বাচনের মুখে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ চীন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব গোপনের চেষ্টা করে করেছে আর এই বিষয়ে বেইজিংয়ের কাছ থেকে যথাযথ জবাব আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে ডব্লিউএইচও। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন।
সোমবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তার দেশ খোলামেলাভাবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে মহামারি মোকাবিলা করেছে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনার পর যেকোনও তদন্ত হতে পারে বলেও জোর দিয়ে বলেছেন তিনি। জিনপিং বলেন, মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী দুই বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে দুইশ’ কোটি ডলার দেবে চীন। আর কোনও টিকা বানানো সম্ভব হলে তা সব দেশকে দেওয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি।
এদিকে ভার্চুয়াল বৈঠকে ডব্লিউএইচও’কে আরও বেশি আইনগত ক্ষমতা দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। বিভিন্ন দেশে প্রাদুর্ভাবের ঘটনা সামনে আনার ক্ষেত্রে এবং তথ্য প্রকাশে বাধ্য করতে সংস্থাটিকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি। দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যেকোনও সময়ই একটি নোবেল সংক্রামক রোগ দেখা দিতে পারে আর আমাদের অবশ্যই আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে সাড়া দিতে পারতে হবে।’
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে দেখা দেওয়া করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪৫ লাখের বেশি মানুষকে সংক্রামিত করেছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন লাখের বেশি মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে এই মহামারি কিভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশন থেকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশ।
ইইউ মুখপাত্র ভার্জিনি বাত্তু-হেনরিকসন বলেছেন, যেকোনও পর্যালোচনার অংশ হিসেবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ‘এই মহামারি কিভাবে ছড়িয়েছে? এর পেছনের এপিডেমিওলোজি (মহামারি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জ্ঞান) কী? এই ধরনের আরেকটি মহামারি এড়াতে এর সব কিছুই সামনে এগিয়ে নেওয়া আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ইইউ মুখপাত্র বলেন, এখন ‘কোনও ধরনের দোষারোপ খেলার’ সময় নয়।
মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা পর্যালোচনার একটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর মঙ্গলবার ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। এটি অনুমোদন পেতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের দরকার পড়বে।