এছাড়া উভয় দফতরে জেলা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ শতাধিক অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে। সংশিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিও লেটারে সংসদ সদস্যরা উল্লেখ করেছেন, বিড়ি শিল্প দেশের একটি প্রাচীন শ্রমঘন কুটির শিল্প। এই শিল্প প্রতিষ্ঠান সরকারকে রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি হতদরিদ্র শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এ শিল্পটি চালু হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলোতে অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। এই নারী শ্রমিকদের বেশিরভাগ বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এসব শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে।
এছাড়া বর্তমান মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে থাকা বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে অনেকেই। এসব শ্রমিকদের কর্ম বন্ধ থাকলেও থেমে নেই জীবনযাত্রার চাহিদা। লাখ লাখ শ্রমিকের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বিড়ি মালিকদের নিতে হচ্ছে। দেশের লাখ লাখ গ্রামীণ দরিদ্র বিড়ি শ্রমিকদের জীবন জীবিকার স্বার্থে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বিড়ির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি না করে কমানোর সুপারিশ করেছেন সংসদ সদস্যরা।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর নামে পাঠানো চিঠিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এই প্রেক্ষিতে আসন্ন ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে বিড়ি শিল্পের ওপর বিদ্যমান শুল্ক কমানো প্রয়োজন। অন্যথায় ফ্যাক্টরিগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়বে। ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে, বাড়বে বেকারের সংখ্যা। বিধায় চলতি অর্থবছরে বিড়ি শিল্পের ওপর হতে কর কমানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহযোগিতা প্রয়োজন।
মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নামে পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়েছে, আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিড়ি শিল্প ফ্যাক্টরিগুলো গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। প্রত্যন্ত গ্রামের নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের স্বার্থে বিড়ি শিল্প অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলিতে যেসব শ্রমিক কাজ করে তার অধিকাংশই স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও বয়স্ক নারী। এছাড়া পুরুষ যারা কাজ করে তারা বোবা, বধির, পঙ্গু ও বয়স্ক।
‘আপনি জানেন, গোপালগঞ্জে অবস্থিত তালা বিড়ির শ্রমিকরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধিকার আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই যে শিল্প শুল্ক মুক্ত কুটির শিল্প হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল, সে শিল্প আজ মহা দুর্যোগের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। শ্রমিকরা আজ অনাহারে দিন যাপন করছেন।’
এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রার্দুভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন পরবর্তী বিড়ি উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা অসহায় হয়ে পড়েছে। যা কাজ হচ্ছে তা অসদুপায়ে এবং এর ফলে নকল বিড়ির দৌরাত্ম্য বাড়ছে। ফলে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। বিড়ি গরিব মানুষ বানায়, গরিব মানুষ খায়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বিড়ির মূল্য স্তর ছিল ৭.১০ টাকা। তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ টাকা করা হয়। এর ফলে বিড়ির বাজার হ্রাস পেয়েছে এবং বিড়ির শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কম দামে নকল বিড়ি ও বিক্রয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার বিড়ি খাত হতে সেই পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না। তাই করোনা মহামারির সময়ে গরিব অসহায় শ্রমিক ও ভোক্তার দিক বিবেচনা করে মূল্য স্তর ও শুল্ক না বাড়িয়ে, বরং বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত অসহায় শ্রমিকরা যাতে কর্মহীন না হয় সেই লক্ষ্যে মূল্য স্তর ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের সদয় দৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।