কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের প্রায় ৬২ শতাংশই ডলার

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের প্রায় ৬২ শতাংশই ডলার

বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের প্রায় ৬২ শতাংশই মজুত আছে ডলারে। বাকি অংশের মধ্যে ২০ শতাংশ আছে ইউরোতে। জাপানের ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ডে সংরক্ষিত আছে প্রায় ৫ শতাংশ করে রিজার্ভ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়





এ মাসের শুরুর দিকে ঢাকার খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। পাকিস্তানে একটি ডলার কিনতে লাগছে ২০০ রুপি আর ভারতে ৮০ রুপি।





যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কাগুজে মুদ্রা বাজারে আসে সে দেশের স্বাধীনতার আগে, ১৬৯০ সালে। তখন মূলত সেনাবাহিনীর ব্যয় মেটানোর জন্য ওই মুদ্রা ব্যবহৃত হতো। স্বাধীনতার ৯ বছর পর ১৭৭৬ সালে প্রথম গ্রহণ করা হয় ডলার চিহ্ন ($)।





ব্যাংক নোট হিসেবে প্রথম ডলার ছাপা হয়েছিল ১৯১৪ সালে। এর এক বছর আগে হয় ফেডারেল রিজার্ভ আইন, যার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। সেই হিসাবে ডলারের বয়স ১০৮ বছরের কাছাকাছি।





যতই অশুভ মনে করা হোক, ডলারে রয়েছে ‘১৩’ সংখ্যার ছড়াছড়ি। যার পিরামিড ‘১৩’ ধাপের, ইগলের নখরের সংখ্যা ‘১৩’, গ্রেট সিলের ‘১৩’টি রেখা ও ‘১৩’টি নক্ষত্র। ডলার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তুলা আর লিলেন। কাগজের কোনো কিছু এতে নেই। ডলারে লেখা আছে একটি নীতিবাক্য—ইন গড উই ট্রাস্ট, যা ১৯৬৩ সালে সংযোজিত হয়।





ডলারের আগে বিশ্বব্যাপী আধিপত্য ছিল ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের। ১৯২০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছে এই মুদ্রা। মূলত ডলার আসার আগে ৫০০ বছর ধরে যেসব মুদ্রা রাজত্ব করেছে, তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনের মুদ্রা। বিশ্বের নানা প্রান্তে এসব দেশের কলোনি থাকায় তাদের মুদ্রাও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।





প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৮) যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয় আড়াই বছর পরে। সেই অর্থে যুদ্ধের আঁচড় দেশটির গায়ে লাগেনি। উপরন্তু, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশগুলোর কাছে প্রচুর অস্ত্র ও সরঞ্জাম বিক্রি করে। বিক্রীত রসদের মূল্য গ্রহণ করে সোনা দিয়ে। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসতে আসতে বিশ্বের মোট মজুত সোনার একটি বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হয়। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র শেষ মুহূর্তে যোগ দেয়। ওই সময়ও মিত্রদের কাছে প্রচুর সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে নিজেদের কোষাগারে বিপুল স্বর্ণমুদ্রার মজুত ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপ তখন বিধ্বস্ত। মানুষের হাতে কাজ নেই।





এ অবস্থায় ১৯৪৪ সালে ৪৪টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ব্রেটন উডস শহরে আলোচনায় মিলিত হয়। সে সময় একটা চুক্তি করে তারা। সিদ্ধান্ত হয়, এসব দেশের মুদ্রার বিনিময়মূল্য নির্ধারিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের ওপর ভিত্তি করে। আর ডলারের মূল্য নির্ধারিত হয় তখন সোনার ওপর ভিত্তি করে। ১৯৪৭ সালে বিশ্বের মোট মজুত করা সোনার ৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের হস্তগত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিপুল সোনা মজুত এবং ডলারের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় সেসব দেশ তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ কারেন্সি (মুদ্রা) হিসেবে ডলার সংরক্ষণে একমত হয়। মূলত ডলারের আধিপত্য সেই থেকে শুরু।





ব্রেটন উডস চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। ঐতিহ্যগতভাবে আইএমএফের প্রধান নির্বাচিত হন ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আর বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো এবং জাপানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। তারা ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সোনা কিনতে থাকে। কমতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সোনার মজুত। এর ওপর আবার ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যয় মেটানোর চাপে ওয়াশিংটন বিপুল পরিমাণ কাগুজে মুদ্রা ছাপাতে শুরু করে। কঠিন হয়ে পড়ে ডলারের সঙ্গে সোনার সংযোগ বজায় রাখা।





এভাবে আসে ১৯৭১ সাল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ঘোষণা করেন, সোনার ওপর ভিত্তি করে ডলারের মূল্য আর নির্ধারিত হবে না, যা ‘নিক্সন শক’ নামে পরিচিত। এর মধ্য দিয়ে ডলার হয়ে পড়ে ‘ফিয়াট মানি’। তারপরও ডলারের গুরুত্ব কমল না। বিশ্বজুড়ে এর কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ১৯৭৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, সৌদি আরব থেকে বিশ্বের যেসব দেশ জ্বালানি তেল আমদানি করবে, তাদের মূল্য পরিশোধ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারে। বিনিময়ে সৌদি আরবকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। এর দুই বছর পর ১৯৭৫ সালে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক সৌদি আরবের মতোই সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ তেল বিক্রির সব অর্থ পরিশোধ করতে হবে শুধু ডলারে। এভাবে দিনে দিনে বিশ্বব্যাপী ডলারের আধিপত্য বাড়তে থাকে।


আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ