সরকারের ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সম্ভাব্য বরাদ্দের পরিমাণ ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেট উপস্থাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট সংখ্যক সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকবেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিকাল ৩টায় অধিবেশন বসবে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ বৈঠক। এতে সরকারের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের পর ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সংক্রান্ত বিলে অনুমোদন সূচক স্বাক্ষর দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনের পরিবর্তে সংসদ ভবনের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে অফিস করবেন। তার প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় এবং একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামালেরও দ্বিতীয় বাজেট। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১০টি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।
আহম মুস্তাফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করলেও বক্তৃতা বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা পাঠের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে প্রধানমন্ত্রী নিজে বইয়ের বাকি অংশ পড়ে শোনান। শুধু তাই নয়, প্রথা অনুযায়ী পরদিন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। তার পরিবর্তে গণমাধ্যমের সামনে আসেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, ‘দেশের মানুষের জন্য হবে নতুন বাজেট। এতে মানুষের জন্য কাজ করা এবং মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দিকনির্দেশনা থাকবে। সরকারের নতুন বাজেটে দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি আমরা। বাজেটে সেসব উপস্থাপন করা হবে।’
আহম মুস্তফা কামালের কথায়, ‘করোনাকালে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়গুলোকে বরাদ্দ দিয়েছি। এর অর্থ কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে কখনোই ভাবিনি। বরাদ্দ দিতেও কার্পণ্য করিনি। কারণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন হয়। তাই সরকারি কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দিতেই হবে। এ বছর আমরা কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট তৈরি করেছি।’
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় হলো স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এছাড়া মূল ১০টি খাতে বরাদ্দের অঙ্ক মোট এডিপি’র ৯৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
নতুন অর্থবছরের এডিপিতে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া ১০টি খাত
১. পরিবহন
২. অবকাঠামো, পানি ও গণপূর্ত
৩. বিদ্যুৎ
৪. স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ
৫. বিজ্ঞান, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি
৬. কৃষি
৭. শিক্ষা ও ধর্ম
৮. পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান
৯. পানিসম্পদ
১০. জনপ্রশাসন।
নতুন বাজেটে সরকারের চলমান সাতটি মেগা প্রকল্পে প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণ
১. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা
২. পদ্মা সেতু: ৫ হাজার কোটি টাকা
৩. মেট্রোরেল: ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা
৪. পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ: ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা
৫. মহেশখালি মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র: ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা
৬. দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন: ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
৭. পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর: ৩৫০ কোটি টাকা
২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। চলমান ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই খাতে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। করোনার কারণে আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আর্থিক সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৯৭ লাখে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।