তবে একাধিক ব্যাংক জানিয়েছে, তারা এই ‘উস্কানিমূলক’ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে না। বিশেষ করে ইউসিবিএল ও প্রাইম ব্যাংক তাদের মধ্যে অন্যতম।
এদিকে চিঠির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা অর্থসংবাদ’কে বলেন, ‘এই খবর শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমরা এমনিতেই করোনা ঝূঁকি নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যেই আমাদের অনেক সহকর্মী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে যদি ব্যাংক আমাদের বেতন কমায় তাহলে তা আমাদের রিজিকের উপর ‘জুলুম’ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। তারা সুবিধা ভোগ করছেন, তাহলে আমাদের বেতন কমাবেন কেন?’
ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ব্যাংকের মালিকরা বিভিন্ন সুযোগ নিলেও কর্মীদেরকে সুযোগ সুবিধা কমিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নস্ট করছে একটি মহল। আমার মনে হয়, সরকার এই বিষয়ে নজর দিবে। এমন সীদ্ধান্ত নেওয়া হলে ব্যাংকিং খাতে মেধাবীদের আগ্রহ কমে আসবে। এর কারণে ব্যংকারদের মাঝে হতাশা দেখা দিবে এবং এই খাতে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।’
উল্লেখ, গত সপ্তাহে বেসরকারি সিটি ব্যাংক লিমিটেড তাদের সব কর্মীর বেতন ১৬ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়। এছাড়া এবি ব্যাংক লিমিটেডও তাদের কর্মীদের বেতন ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এই দুই ব্যাংককে দেখে অন্য ব্যাংকগুলোও বেতনভাতা কাটছাঁটে উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে, এমনিতেই এমন আশংকা করছিলেন ব্যাংক কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে বিএবির চিঠিকে বেতন কমানোর ক্ষেত্রে উস্কানি হিসেবে দেখছেন তারা।
সংগঠনটি ৪০ হাজার টাকার বেশি বেতনধারী সব গ্রেডের কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের বেতন ১৫ শতাংশ কমানোর ‘উস্কানি’ দিয়েছে।
রোববার (১৪ জুন) সংগঠনের সব সদস্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিএবির চিঠিতে ১৩ দফা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এসব পরামর্শের মধ্যে রয়েছে-
০১. মাসিক ৪০ হাজার টাকার বেশি গ্রস বেতনধারী কর্মকর্তাদের বেতন ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো।
০২. ব্যাংকে সব ধরনের প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট ও ইনসেনটিভ বোনাস বন্ধ রাখা।
০৩. ব্যাংকে চলমান নিয়োগসহ সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখা।
০৪. নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও সাব-ব্রাঞ্চ বন্ধ রাখা।
০৫. সকল প্রকার Fixed Asset কেনা বন্ধ রাখা।
০৬. সব ধরনের স্থানীয় ও বিদেশি প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা।
০৭. সব বিদেশ ট্যুর বন্ধ রাখা।
০৮. সব ধরনের সিএসআর, অনুদান ও চ্যারিটি বন্ধ রাখা।
০৯. পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখা।
১০. সকল কাস্টমার গেট টুগেদার বন্ধ রাখা।
১১. অফিসার এক্সিকিউটিভ গেটটুগেদার ও ম্যানেজার কনফারেন্স বন্ধ রাখা।
১২. বড় ধরনের ব্যয়, যেমন-হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ইত্যাদি কেনা সীমিত পর্যায়ে রাখা।
১৩. অন্যান্য ব্যয় সীমিত পর্যায়ে রাখা।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত নানা সমস্যার মুখে পড়ায় এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে-ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া, বিনিয়োগের উপর সুদের হার কমে যাওয়া, রিকভারি শূন্য অবস্থায় চলে আসা, ওভারডিউ বাড়তে থাকা, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কমে যাওয়া ইত্যাদি।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে এপ্রিল ও মে মাসে ব্যাংক কর্মীদের দেওয়া প্রণোদনা এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাংক কর্মীদের চিকিৎসার ব্যয়, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ইত্যাদি বিষয়কেও ব্যাংকের বর্তমান সংকটের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
চিঠিটি সংগঠনের নিজস্ব লেটারহেড প্যাডে দেওয়া হলেও, পরামর্শগুলো দেওয়া হয়েছে সাদা কাগজে। এছাড়া সংগঠনের নির্বাহী কমিটির কোনো বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, না-কি সংগঠনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার নিজের এখতিয়ার বলে দিয়েছেন, তার কোনো উল্লেখ নেই চিঠিতে।
অবশ্য চিঠিতে তার স্বাক্ষর নেই, আছে বেতনধারী সেক্রেটারি জেনারেলের সই।