এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ব্যাংক কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় তার পণ্য কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য। অথবা প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে কী করবে বা করতে যাচ্ছে এইসব বিষয়ে গ্রাহকদের জানানোর জন্য। এখন ব্যাংকের কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন না দেয়ার বিষয়ে এ ধরনের একটি ঘোষণা গণমাধ্যমের সম্প্রসারণ স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম প্রধানত বিজ্ঞাপনের ওপর টিকে থাকে। সার্কুলেশন দিয়ে পত্রিকা খরচ মেটানো সম্ভব না। কারণ একটি পত্রিকা ছাপাতে প্রায় ১৬ থেকে ২০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু পাঠককে আমরা দিচ্ছি মাত্র ১০ টাকায়। কমিশন বাদ দিলে আমরা ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা পাই। বাকি টাকা ভর্তুকি হিসেবেই আমাদের দিতে হয়। এটা মূলত বিজ্ঞাপন থেকেই আসে। পত্রিকাসহ অন্যান্য মিডিয়া যেমন টেলিভিশন, অনলাইন পত্রিকাগুলোও বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। এখন কোনো সংস্থা বা সংগঠন থেকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়ার মতো ঘোষণা দেয়া গণমাধ্যমের জন্য সুবিবেচনাপ্রসূত আচরণ হবে না।
এই আচরণ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত করবে উল্লেখ করে সাইফুল আলম বলেন, এ ঘোষণা দেশ ও জাতি গঠনে গণমাধ্যমের যে ভূমিকা রয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত থাকতে পারে না। এটি একটি ‘কালো সিদ্ধান্ত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ভবিষ্যতে বলে জানান গণমাধ্যম কর্মীদের এ নেতা।
বিএবির এ ঘোষণা বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। যদি করতে হয় আমার পত্রিকায় লিখবো।
এদিকে বিএবির ঘোষণাকে গণমাধ্যম বিরোধী উল্লেখ করে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত ব্যাংক তার প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু কোনো সংস্থা থেকে ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা এটা মিডিয়ার সাথে বৈরী আচরণ। যেটা খুবই হতাশাজনক। কারণ ব্যাংক গণমাধ্যমের সম্পর্কের ভিত্তিতে তাদের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। এটা একটি পক্ষ বা মহল ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করতে পারে না।
তিনি বলেন, ব্যাংকের ব্যয় কমানোর জন্য কর্মীদের বেতন কমানো অথবা বিজ্ঞাপন বন্ধ করে নয়, পরিচালকদের দুর্নীতি বন্ধ হলেই ব্যাংকের খরচ কমে যাবে। তাই গণমাধ্যম বিরোধী এ সিদ্ধান্ত বিএবিকে প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
গণমাধ্যম সম্পাদকদের এ নেতা বলেন, আজকে এডিটরস গিল্ডের একটি সভা ডাকা হয়েছে। সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষায় সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে বিবৃতি দেয়া হবে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা একসঙ্গে বসেছিলাম। একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা যায় তার একটা সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কোনো ব্যাংকে এ চিঠি বা নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কারণ, ব্যাংক কীভাবে চলবে সেটা ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তাদের বিনিয়োগ ও স্যালারির ধরনও ভিন্ন। ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে। এক্ষেত্রে বিএবি কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
এদিকে ব্যাংকের ব্যয় কমাতে সম্প্রতি ১৩ দফা সুপারিশ করে বিএবির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ব্যাংকারদের বেতন-ভাতা কমানো ও পত্রিকা ও টেলিভিশনে সব ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখা অন্যতম।
সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যাংকগুলোতে চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশও করা হয়। এছাড়া নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপ-শাখা খোলা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
করোনা সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংককে সচল রাখার জন্য প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে বলে বিএবি পক্ষ থেকে বলা হয়। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিএবি।
১৩ দফা সুপারিশ সম্বলিত চিঠিতে আরও আছে, সব ধরনের স্থায়ী সম্পদ ক্রয় বন্ধ রাখা, কর্মীদের লোকাল ও বিদেশি প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা, সব বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা, সব প্রকার সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখা, পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব প্রকার বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখা, সব কাস্টমার গেট-টুগেদার বন্ধ রাখা।