রবিবার (২১ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারকে ভালো করার কোন পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা নেই। এই বাজারে গতি ফেরাতে বিএসইসি, মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশন, ডিএসই, সিএসই, বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ, বিএপিএলসি যতগুলো প্রস্তাব দিয়েছে, তার কোনোটাই বিবেচনা করা হয়নি। বরং প্রস্তাবিত বাজেটে এমন কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে, যা শেয়ারবাজারে নতুন নতুন কোম্পানি লিস্টিং করাকে নিরুৎসাহিত করবে। যেমন লিস্টেড কোম্পানির টেক্স না কমিয়ে উল্টো নন-লিস্টেড কোম্পানিগুলোর টেক্স ২.৫% কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করতে উৎসাহিত হবে না। অথচ পৃথিবীর সব দেশ বিশেষ করে ভারত সরকার শেয়ারবাজারে লিস্টেড কোম্পানির টেক্স ৫% কমিয়ে দিয়েছে। ভারত সরকার লিস্টেড কোম্পানিগুলোকে, যারা অ্যাডভান্স ট্যাক্স দিয়েছিল সেটাও তাদের ফেরত দিয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি রুপি। বিভিন্ন দেশের সরকার এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় শেয়ারবাজার যেন ভালো থাকে, চাঙ্গা থাকে এবং বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য বিভিন্ন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করছে এবং দিয়ে যাচ্ছে। সেটা আমেরিকা হোক ইন্দোনেশিয়া হোক, থাইল্যান্ড হোক, চায়না হোক, মালয়েশিয়া হোক। সবার একটি উদ্দেশ্য শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা রাখা এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করা।
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে সব কিছু উল্টো। যেমন গত বছর ডিভিডেন্ড ইনকাম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছিল। এবার বাজেটেও সেটাকে রিপিট করা হয়েছে। যেটা রিপিট করার প্রয়োজন ছিল না। যেহেতু এটা বলবৎ আছে।
গত জানুয়ারিতে শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছিল, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ এর বাজেটে সেগুলো তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো গত জানুয়ারিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারল্যসংকট দূর করার জন্য প্রত্যেকটি ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে মাত্র ৪% সুদে শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার জন্য ২০০ কোটি টাকা করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং এই টাকাটা নিতে যদি কোন ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট ক্রস করে সেটা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ এই টাকাটা ব্যাংকগুলোকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। যদি কোন ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার ফলে বছর শেষে লসও করে, তাহলে তাকে ওই লস এর জন্য কোন প্রভিশন করতে হবেনা। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো যেমন সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণীকে শেয়ারবাজারে সক্রিয় অংশগ্রহন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আইসিবিকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্য হলো ছয় মাসেও কোনটি কার্যকর হয়নি।
গত ছয় মাসে একটি সরকারি ভালো কোম্পানির শেয়ার direct listing এর মাধ্যমে আসার কোন ঘোষণাও আসেনি। অথচ অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর জানুয়ারিতে দেওয়া ৬টি নির্দেশনা তুলে ধরেছেন, এটা আমার কাছে খুবই অবাক লেগেছে। তিনি যদি ছয় মাস আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ৬ টি নির্দেশনা দিয়েছিল তার কোন একটি বাস্তবায়ন হয়েছে, অথবা কোন একটি বাস্তবায়নের পথে অথবা বাস্তবায়নের পথে কোন অন্তরায় আছে কিনা, সেটা যদি তুলে ধরতেন, তাহলে শেয়ারবাজার এবং আমরা অনেক উপকৃত হতাম এবং বাস্তবতার আলোকে আমরা সবকিছু পর্যালোচনা করতে পারতাম।
তিনি বলেন, আমি বেশি কথায় যেতে চাই না। এখন যে বিষয়টি আমি তুলে ধরতে চাই তা হলো মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ বাজেটে অত্যন্ত সহজ শর্তে অপ্রদর্শিত কালো টাকা সাদা করে মূল অর্থনীতিতে নিয়ে আসার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, করোনা ভাইরাসের জন্য দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সময়ে তা অত্যন্ত যুগান্তকারী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। অপ্রদর্শিত টাকা যেখানে যে অবস্থায় আছে সেটা ফিক্সড ডিপোজিট হোক, সঞ্চয় পত্রেই হোক, ব্যাংকে থাকুক, বাড়িতে থাকুক বা কারো সিন্ধুকেই থাকুক যেখানেই থাকুক মাত্র ১০% ট্যাক্স দিয়ে টাকাটা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন এবং সেখানে কোনো শর্ত নেই। কিন্তু হতাশ হওয়ার কারণ হলো শেয়ারবাজারে শেয়ারে যদি কেউ বিনিয়োগ করে তাকে ১০% ট্যাক্স দিয়ে তিন বছরের জন্য টাকাটা সেখানে ধরে রাখতে হবে। এর অর্থ হল আমি যদি বুঝে থাকি কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারকে সম্পূর্ণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। শর্ত নিয়ে কেউ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না, যার প্রমাণ আমরা পেয়েছি ১৯৯৭-৯৮, ২০১১-১২ সালে বাজেটে। যেখানে একই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং দুই বছর শেয়ার মার্কেটে রেখে দিতে হবে এই শর্ত দেওয়ার ফলে ঐ সময়ে এটা কোন কাজে আসেনি, কেউ শেয়াবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগও করেনি। বরং এখন যদি শেয়ারবাজারে শর্ত দিয়ে বিনিয়োগর কথা বলা হয়, তাতে করে যারা অপ্রদর্শিত কালো টাকা বিনিয়োগ করে শেয়ার কিনেছেন তারা উল্টো শেয়ার বিক্রির সুযোগ পেলে শেয়ারগুলো বিক্রি করে টাকাটা ব্যাংকে নিয়ে ১০% ট্যাক্স দিয়ে টাকাটা সাদা করে নিবে। কারণ সেখানে কোন শর্ত নেই। এতে করে ব্যাপকভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা কালো টাকায় যারা শেয়ার কিনেছেন, তারা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।
অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রকিবুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আপনার এবং আপনার সরকারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আপনি ভালো বুঝবেন। আপনি বলেছেন শেয়ারবাজার চাঙ্গা রাখা সরকারের কাজ না, সরকারের কাজ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা আর অর্থনীতি শক্তিশালী হলে শেয়ারবাজার এমনিতেই চাঙ্গা হবে। আপনার এই বক্তব্যের সাথে আমি একেবারেই একমত হতে পারলাম না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী পৃথিবীর সব দেশের Monetary Policy তে Money Market এবং Capital Market কে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। Capital Market কে vibrant করার জন্য সব ধরনের প্রণোদনা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সে দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক দিয়ে থাকে। কারণ ক্যাপিটাল মার্কেটকে শক্তিশালী করে অর্থনৈতিক কে চাঙ্গা রাখা সে সকল দেশের লক্ষ্য। বিভিন্ন Developed এবং Developing Country গুলোতে পুজিবাজার সে দেশের GDP তে মিনিমাম ৬০-১৫০% পর্যন্ত কন্ট্রিবিউট করে থাকে। অপরদিকে আমাদের দেশের পুঁজিবাজার মাত্র ১৪-১৫% কন্ট্রিবিউট করে যেটা একেবারেই গুরুত্বহীন। একসময় সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত ভাই বলেছিলেন আমাদের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের কোন গুরুত্বই নেই। আবার এক সময় অনেক অর্থনীতিবিদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন সচিবরা বলেছিলেন পুঁজিবাজার হলো একটি জুয়ার কোর্ট, মাছের বাজার এবং পুঁজিপতিদের শোষণের হাতিয়ার। কিন্তু বিশ্বের সকল দেশের পুঁজিবাজার প্রমাণ করেছে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমার সকল অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরলাম। আশা করি আপনি বাস্তবতার আলোকে, ইমোশন থেকে বের হয়ে, কারো প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না। আমি আপনার সফলতা কামনা করছি।