বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১২টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ গত বছরের জুন শেষে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৬ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি আর নানা অব্যবস্থাপনায় ব্যাংক খাতে চলছে একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। যাচাই-বাছাই না করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়া হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে খেলাপি হয়ে পড়ছে। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। বাড়তি অর্থ জোগাতে হাত দিতে হচ্ছে মূলধনে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সংকট।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলধন ঘাটতিতে থাকা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোনালী ব্যাংকের।
বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এছাড়া জনতা ব্যাংকের ৯৩৩ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৭৮৮ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৫৪৬ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৫৬২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৬৫২ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৬৯১ কোটি, কমিউনিটি ব্যাংকের ২ কোটি ৭০ লাখ এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের মূলধন ঘাটতি ৫৯ কোটি টাকা।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৭০১ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে আইএমএফ বলছে, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াই লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে।