এর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৭৮১ ডলারে উঠেছিল। এরপর গত আট বছরের মধ্যে এবারই প্রথম প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৭৮০ ডলার ছাড়িয়ে গেল। অবশ্য মঙ্গলবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৭৮২ ডলার স্পর্শ করায় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে রেকর্ড ভেঙে গেছে।
মহামারি করোনার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বর্ণের দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৪৫৪ ডলার। এরপর করোনার প্রকোপের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬০ ডলারে ওঠে।
মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে বড়পতন হয়। এক ধাক্কায় দাম কমে প্রতি আউন্স ১৪৬৯ ডলারে নেমে আসে। মার্চে দরপতন হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি।
হু হু করে দাম বেড়ে মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১৭৪৮ ডলারে ওঠে। এরপর ছোটখাটো উত্থান-পতন হলেও সম্প্রতি টানা বাড়ছে স্বর্ণের দাম। ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ১৭৭২ ডলারে ওঠে। এতে বছরের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বাড়ে ২৫ শতাংশ।
চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসেই স্বর্ণের দাম বেড়েছে। তবে মঙ্গলবার (৩০ জুন) বড় উত্থান হয়েছে। একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১০ ডলার বেড়ে রেকর্ড ১৭৮৩.৩০ ডলারে উঠেছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে প্রায় ২৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ল স্বর্ণের দাম।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গত ২২ জুন বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সাধারণত ভরিতে এক-দেড় হাজার টাকা করে বাড়ানো হলেও এবার এক লাফে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম পাঁচ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়ানো হয়। অবশ্য দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পরে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ২০ ডলারের উপরে বেড়েছে।
গত ২৩ জুন থেকে দেশের বাজারে কার্যকর হওয়া নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম পাঁচ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম চার হাজার ৯০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৬১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৭ হাজার ৬৪৭ টাকা করা হয়েছে।
স্বর্ণের এই দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বরাত দিয়ে বলা হয়, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্বর্ণের মূল্য সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ফলে দেশীয় মার্কেটে স্বর্ণের মূল্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজুস কার্যনির্বাহী কমিটি টেলি-কনফারেন্সে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৩ জুন থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে।