জেএমআই গ্রুপের অপর এক কোম্পানি, পুঁজিবাজারে আসার প্রক্রিয়ায় থাকা জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেকচারিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে উঠা মাস্ক জালিয়াতির প্রেক্ষিতে আব্দুর রাজ্জাককে তলব করেছে দুদক। তিনি জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান।
করোনাভাইরাসের এক সংকটকালে সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) মাস্কসহ মেডিক্যাল সামগ্রি সরবরাহের ক্ষেত্রে আব্দুর রাজ্জাকের জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট প্রতারণার আশ্রয় নেয় বলে অভিযোগ আছে। কোম্পানিটি সিএমএসডিতে ‘নকল এন-৯৫’ সরবরাহ করে বলে এই অভিযোগ।
তবে গণমাধ্যমে ওই নকল মাস্কের খবর প্রকাশের পর সিএমএসডির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, তারা জেএমআইয়ের কাছ থেকে এন-৯৫ মাস্ক কেনার জন্য কার্যাদেশ দেয়নি। অন্যদিকে জেএমআইয়ের রাজ্জাক দাবি করেছিলেন, তারা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়ে তা সরবরাহ করতে গিয়ে ‘ভুল করে’ এন-৯৫ মাস্কের কার্টন দিয়ে ফেলেছিল তাদের কর্মীরা। আর এই ‘এন-৯৫ মাস্ক’ তাদের কারখানায় উৎপাদিত হয়েছে, যা ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে।
অবচেতনভাবে রাজ্জাক এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণা বিষয়টি স্বীকার করে ফেলেন। কারণ বিশ্বে ‘এন-৯৫ মাস্ক’ উৎপাদন করে কেবল একটি কোম্পানি, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের থ্রি এম ইনকরপোরেশন। বিশ্বের কয়েকটি দেশে এর কারখানা থাকলেও বাংলাদেশে কোনো কারখানা নেই। আবার জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিটকেও তারা এই মাস্ক উৎপাদনের অনুমতি দেয়নি। এর অর্থ অবৈধভাবেই জেমএমআই দেশে ‘এন-৯৫’ মাস্ক উৎপাদন করছিল। এটি যদি ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে থেকে থাকে তাহলেও বড় অপরাধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি, কারণ যে পণ্য উৎপাদনের অনুমতি নেই সেটি পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনেরও সুযোগ নেই।
এবিষয়ে জেএমআই গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন মানিক অর্থসংবাদকে বলেন, আসলে ভুলবসত এটি হয়েছিল। ভুলটা এমন সময়ে হয়েছে যেটা মানুষ ভুল হিসেবে মেনে নিচ্ছেনা।আর এই ভুলের মাশুল প্রতি পদে পদে কোম্পানি দিচ্ছে।আমরা কেএন৯৫ মাস্ক এর অনুমতির জন্য স্বাস্থ্যঅধিদপ্তরে আবেদন করেছি।
স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, জেএমআই গ্রুপ গোপনে তাদের কারখানায় নকল এন-৯৫ মাস্ক উৎপাদন করে সেটি বাইরে বিক্রি করেছে। আর অনেক দামে এগুলো কিনে অরিজিনাল এন-৯৫ মাস্ক ভেবে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ হয়তো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আর এই নকল এন-৯৫ মাস্কেরই কয়েকটি কার্টন ভুলে করে সিএমএসডিতে চলে যাওয়ার পর বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে গেছে।
শুধু দুদক নয়, সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমেও বিষয়টি নিবিড় তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নকল করার মাধ্যমে জেএমআই গ্রুপ ও এর ব্যস্থাপনা পরিচালক বড় ধরনের অপরাধ করেছে। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা জরুরি।