বৃহস্পতিবার (০২ জুলাই) ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নতুন ট্রেক ইস্যু করার ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা আবেদন ফি ও ২ কোটি টাকা নিবন্ধন ফি ঠিক করা হয়েছে। তবে এতে আপত্তি জানিয়েছেন সভায় অংশ গ্রহণ করা ৩ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের মধ্যে শাকিল রিজভী এবং মোহাম্মদ শাহজাহান। আগেরবার আপত্তি জানানো আরেক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন গতকাল সভায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
ডিএসইর পর্ষদের গতকালকের নির্ধারিত ফি’র বিষয় প্রস্তাবিত আকারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার আলোকে আগামি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পাঠানো হবে। সেখানে ২ শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের আপত্তির বিষয়গুলোও সংযুক্ত করে দেওয়া হবে।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী অর্থসংবাদেক বলেন, গতকালকের পর্ষদ সভায় ট্রেক বিক্রির জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ২ কোটি টাকা নিবন্ধন ফি ঠিক করা হয়েছে। তবে এতে আমাদের ২ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের আপত্তি রয়েছে। এত কম মূল্যে ট্রেক বিক্রি হলে তো মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে ট্রেক কেনার জন্য। আমি মনেকরি এখনও যৌক্তিক দর হয়নি। আমি ও মোহাম্মদ শাহজাহান ৫ কোটি টাকা নিবন্ধন ফি প্রস্তাব করেছি।আরেকটা মিটিং এর মাধ্যমে এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে ডিএসই।
জানো গেছে, ডিএসইর বর্তমান ট্রেকহোল্ডারদের মধ্যে প্রায় ৯০টি প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি টাকার নিচে রয়েছে। তাই নতুন ট্রেক ইস্যুর ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি বা যে পরিমাণ করা হবে, বিদ্যমান ট্রেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোরও একই পরিমাণে উন্নিত করা বাধ্যতামূলক করতে হবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় অসমতা তৈরী হবে।
গত ১৬ মার্চ ডিএসইর পর্ষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিএসইসির প্রস্তাবিত ৫ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি ও ১ লাখ টাকা আবেদন ফিতে সম্মতি জানিয়েছিল ডিএসইর পর্ষদ। তবে ওই সম্মতিতে আপত্তি ছিল ৩ শেয়ারহোল্ডার পরিচালক শাকিল রিজভী, মিনহাজ মান্নান ইমন এবং মোহাম্মদ শাহজাহান। কিন্তু মামলা জটিলতায় মিনহাজ ইমন মান্নান ডিএসইর পর্ষদের গতকালকের সভায় উপস্থিত ছিলেন না। অন্যথায় এবারও আপত্তির তালিকায় ৩ জন থাকতে পারতেন।
ওইসময় ট্রেক ইস্যু নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তোলা হয় ফি নির্ধারন নিয়ে। প্রকাশিত খসড়ার ১ লাখ টাকার আবেদন ফি ও ৫ লাখ টাকা নিবন্ধন ফির পরিমাণ অনেক কম হয়েছিল বলে প্রশ্ন তোলা হয়। তাদের মতে, সর্বশেষ ২০১৩ সালে ডিএসইর একটি মেম্বারশীপ বিক্রি করা হয়েছে ৩২ কোটি টাকার উপরে। এছাড়া স্ট্যাটেজিক ইনভেস্টরদের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির দর হিসাবে একটি ব্রোকারেজ হাউজের দাম হয় ১৫ কোটি। সেখানে ৬ লাখ টাকায় ট্রেক ইস্যু করা হবে। এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে বর্তমান মেম্বারশীপের ভ্যালু কোথায় নেমে আসবে।
এ নিয়ে ডিএসইর পরিচালকসহ কেউ কেউ বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সঙ্গে আলাপ করেন এবং ওই মুহূর্তে বিধিমালাটি প্রণয়ন না করার দাবি করেন। ওই দাবির আলোকে এবং সরকার ঘোষিত ছুটির কারনে ট্রেক বিধিমালা খসড়ার গেজেটে প্রকাশ করতে না পারা ও জনমত জরীপের সময় পার হয়ে যাওয়ায় গত ২৯ এপ্রিল ৭২৫তম নিয়মিত কমিশন সভায় জনমত যাছাইয়ে নতুন করে সময়সীমা নির্ধারন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিগত কমিশন। এ সিদ্ধান্তের জন্য খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে ডিবিএ ধন্যবাদ জানায়। এছাড়া ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, শাকিল রিজভী ও মোহাম্মদ শাহজাহান ধন্যবাদ জানান।
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের ১৬ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের তারিখ হইতে ৫ বছর অতিক্রান্ত হবার পরে স্টক এক্সচেঞ্জ নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদনকারীর অনুকূলে ট্রেক ইস্যু করা যাইবে। কিন্তু ডিএসই ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হওয়ার পরে প্রায় সাড়ে ৬ বছর পার হয়ে গেলেও স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ট্রেক ইস্যু করার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিএসইসি ডিএসইর পর্ষদের সম্মতি নিয়ে ট্রেক ইস্যুর লক্ষ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করেছিল। এতে ডিএসইর পর্ষদের ৩ জনের আপত্তি থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সম্মতি ছিল।
উল্লেখ্য, কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশনের অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক কিনতে পারবেন। গ্রাহকদের পক্ষে শেয়ার বেচা-কেনা করে দেওয়ার ব্যবসা করতে এই ট্রেক পাওয়া যাবে। তবে এই ট্রেকের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার হবেন না। শুধুমাত্র শেয়ার ও ইউনিট বেচা-কেনা করার সুযোগ পাবেন। কোন প্রতিষ্ঠান ট্রেক পেলে তা হস্তান্তর করা যাবে না। আবার নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুযায়ী স্টক-ডিলার বা স্টক-ব্রোকার’র সনদ নিতে হবে। এই সনদ নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না পারলে ট্রেক বাতিল হয়ে যাবে।