বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৫ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠায়। এতে সুদহার কমানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের অবহিত করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়।
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে শিল্প খাতের অবকাঠামো নির্মাণে ৪২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ তিন হাজার ২৮০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করে। যার মেয়াদ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এ তহবিল থেকে ডলার ও বাংলাদেশি মুদ্রায় উদ্যোক্তারা দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নিতে পারবেন।
শিল্পের অবকাঠামো উন্নয়নের ঋণে সুদহার নির্ধারিত হতো বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহারের ভিত্তিতে। বর্তমানে এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার গড়ে ৭ দশমিক ৪৪ থেকে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ নিতে হলে ওই হারে সুদ দিতে হতো।
সরকারি হিসাবে টাকার ঘাটতি দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা পরিশোধ করে দেয়া হয়। ঘাটতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি হলে এর বিপরীতে একটি ট্রেজারি বিল ইস্যু করা হয়। এসব ট্রেজারি বিল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে সরকারকে ঋণের জোগান দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিল রয়েছে। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের ঋণের ক্ষেত্রে এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে ঋণের সুদহার আরোপের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে যে সুদে আমানত সংগ্রহ করে সে তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ব্যাংকের আমানতের সুদহার নিয়ে একটি গড় হার তৈরি করে এবং তা প্রকাশ করে।’
গত মাসে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ আমানতের গড় সুদহার বা এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারের মধ্যে যেটিতে কম আসবে সে হারে উদ্যোক্তারা ওই তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বর্তমানে এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গড় আমানতের সুদহার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ দুটির মধ্যে যেটি কম সেই হারে আলোচ্য তহবিল থেকে উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে পারবেন। অর্থাৎ প্রচলিত সুদহারে গড়ে ২ থেকে আড়াই শতাংশ কমে উদ্যোক্তারা এখন থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
তহবিলটি পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (আইপিএফএফ) প্রজেক্ট সেল নামে একটি বিভাগ গঠন করা হয়েছে।
৪২ কোটি ডলারের ওই তহবিলের মধ্যে ছয় কোটি ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ৩৬ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তহবিলটি আবর্তনশীল বলে সুদসহ যেসব ঋণ পরিশোধ করা হবে সেগুলো আবার তহবিলে যোগ হয়ে এর আকার বেড়ে যাবে। এগুলো থেকে আবার ঋণ দেয়া হবে।