দেশের পুঁজিবাজারে কি ধরনের পরিবর্তন আনতে চান ? জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন,বাজারে নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসবো। সম্পূর্ন প্ল্যাটফর্মকে আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক করতে চাই। ২৪ ঘন্টা মার্কেট চলবে ব্যাংকের মত। ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে মানুষ যেমন প্রয়োজন মত যখন খুশি টাকা তুলতে পারে, ঠিক শেয়ারবাজার থেকেও যেন মানুষ যখন খুশি লেনদেন করতে পারে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থেকে আমাদের মার্কেটের ট্রেড করতে পারবে। আমরা পুরো বাজারকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবো। যাতে এখানে কোন দূর্নীতি না হতে পারে সেজন্য সবকিছুতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। আর এ জন্য আইটি বা প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব অনেক। বর্তমান উন্নত বিশ্ব প্রযুক্তি নির্ভর আর আইটি মানেই কিন্তু ট্রান্সপারেন্ট।
তিনি আরও বলেন, আমরা আরও কিছু পরিবর্তন নিযে আসবো, যেমন পুঁজিবাজারের উপর যেন মাস্টার্স করতে পারে সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অ্যাপিলিয়েশনে যাবো। তখন এই লোকগুলো যখন মার্কেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে তখন অনেক পরিবর্তন আসবে।
আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডের অবস্থা ভালো না, তাহলে বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করা কি সম্ভব? জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই সম্ভব। আমাকে একটা বছর সময় দেন, দেখবেন আমি কি করি। দেখেন মার্কেট ক্যাপ কোথায় যায়। আর মানুষকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে তখন মানুষ বুঝবে যে কেন এবং কোন মিউচুয়ার ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। আর আমরাও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে শক্তভাবে দেখবো কোন কোন মিউচুয়ার ফান্ড ঠিকমত লভ্যাংশ দিচ্ছেনা। কর্পোরেট গর্ভনেন্সের মধ্যে নিয়ে আসবো তাদেরকে।
দেশের অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজারের আকার অনেক ছোট এবং এর অবদান অর্থনীতিতে খুবই কম। দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার কিভাবে ভুমিকা রাখবে? এবিষয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়াতে হলে এর আকার বড় করতে হবে বলেই বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে হবে। আর সে জন্য ইতিমধ্যেই ৪ টি ব্যাংক কে পারপিচুয়াল বন্ডে ১৬ শত কোটি টাকা দিয়েছি। আমি যদি ৫০ টি ব্যাংক কে ৪০০ কোটি টাকা করে পারপিচুয়াল বন্ডে দিয়ে দেই, তাহলে এখানেই তো ২০ হাজার কোটি টাকা।বন্ড মার্কেট শক্তিশািলী হলে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে ব্যাংকের বন্ডে বিনিয়োগ করবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর ফলে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তার থেকে দেশের অর্থনীতি টার্ন অ্যারাউন্ড করা শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই আমাদের পুঁজিবাজারে লেনদেন এবং সূচক বাড়ছে। এটার ধারাবাহিকতা রক্ষা হলে অল্প সমেয়ের মধ্যেই আমাদের বাজার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে কোন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেটে নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসা এবং ভিন্নতা ও নতুনত্ব আনা চ্যালেঞ্জ। নতুন মার্কেট তৈরী করা, ইক্যুইটি মার্কেটকে বন্ড এবং ডেরিভেটিভস এর দিকে নিয়ে যাওয়া। দেখুন গতানুগতিক ধারায় চলতে গেলে কোন চ্যালেঞ্জ নেই, ৯ টা থেকে ৫ টা অফিস করলে, ফাইলে সই করলাম , বাসায় চলে গেলাম। তাতে কোন চ্যালেঞ্জ নেই, কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে গেলে জ্যালেঞ্জ আসবেই। মার্কেটের প্রয়োজনে কাজ করতে গেলে অনেক বাঁধা আসবেই।
তিনি আরও বলেন, মানুষকে ফাইন্যান্সিয়াল লিট্যারাসিতে শিক্ষিত করতে হবে। মানুষ এখনও এই বাজার ভালোভাবে চিনেন না, শেয়ার স্টক কি ? সেটা যদি মানুষকে না চিনাতে পারি, তাহলে মানুষ কিভাবে এখানে আসবে? সে তো ব্যাংক আর পোষ্ট অফিসেই যাবে। ঘরে ঘরে ফাইন্যান্সিয়াল লিটারিসি পৌছে দিতে হবে। তাহলে মানুষ বুঝবে কেন শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে এবং কেন শেয়াবাজারে আসতে হবে। এজন্য আমরা দু’টো ইনষ্টিটিউটকে চ্যাঞ্জ করে ফেলছি, যারা সারাক্ষন বিও অ্যাকাউন্ড হোল্ডারদেরকে ট্রেনিং করাবে অনলাইনে এবং অফ লাইনে। বন্ড, ডেরিভেটিভস সহ নতুন প্রোডাক্ট সম্পর্কে মানুষকে ট্রেনিং দিবে।