খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা কমায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের প্রভাবে সম্প্রতি দাম বেশ কমে যায়। তবে কোরবানির ঈদ কাছাকাছি চলে আসায় এখন পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সামনে আরও বাড়বে।মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে কয়েক মাস ধরেই বেশিরভাগ ক্রেতা একবারে পেঁয়াজ কিনছেন। আগে যারা এক কেজি, আধা কেজি পেঁয়াজ কিনতেন এখন তাদের অনেকে পাঁচ কেজি বা তার বেশি পেঁয়াজ কিনছেন। ফলে পেঁয়াজ কেনার চাপ এক সঙ্গে পড়ছে। তখন দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার যখন কেনা শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন বিক্রি বেশ কমে যাচ্ছে। ফলে দামও কমছে। এ কারণেই করোনার মধ্যে পেঁয়াজের দাম বেশ ওঠা-নামা করছে।
ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর যে কয়টি পণ্যের দামে ব্যাপক উত্থান-পতন হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পণ্য পেঁয়াজ। গত চার মাসে অন্তত ১২ বার পেঁয়াজের দাম ওঠা-নামা করছে। অবশ্য করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার আগেও পেঁয়াজের দামে বেশ অস্থিরতা দেখা যায়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি রেকর্ড ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে। আর চলতি বছরের মার্চের শুরুতে রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত। ভারত রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর দেশের বাজারে দফায় দফায় কমতে থাকে পেঁয়াজের কেজি। কয়েক দফা দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় নেমে আসে।
এর মধ্যেই দেশে শুরু হয়ে যায় মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ। করোনার আতঙ্কে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাড়তি কিনে রাখার এক ধরনের হিড়িক পড়ে যায়। এতেই ৪০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে ৮০ টাকায় উঠে যায়।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদফতর ও র্যাব। পেঁয়াজের বাজারে চলে একের পর এক অভিযান। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও অভিযান চালিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। এতে আবারও দফায় দফায় দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নেমে আসে।
তবে রোজার আগে আবারও অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। কয়েক দফা দাম বেড়ে রোজার শুরুতে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকায় পৌঁছে যায়। এরপর রোজার মাঝামাঝি সময়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ৪৫ টাকায় নেমে আসে। এ পরিস্থিতে ঈদের আগে আবার দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয় পেঁয়াজের কেজি। তবে ঈদের পর চাহিদা কমলে পেঁয়াজের কেজি আবার ৪০ টাকায় নেমে আসে।
অবশ্য এ দামও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। জুনের মাঝামাঝি সময়ে চাহিদা বাড়লে আবার পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৫৫ টাকায় ওঠে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে বাড়তে থাকে আমদানি করা পেঁয়াজের। ফলে চলতি মাসের শুরুতে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২০ টাকায় নেমে আসে। যার প্রভাবে কমে দেশি পেঁয়াজের দামও। ৫৫ টাকা থেকে কমতে কমতে গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা পর্যন্ত নেমেছিল।
এ পরিস্থিতিতে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ক্রেতারা পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ বাড়ানোয় আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে। ৩০ টাকায় নেমে যাওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবি জানিয়েছে, এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি ও আমদানি উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজার থেকে এখন কেজিতে ৫ টাকা বেশি দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ফলে আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। কম দামে কিনতে পারাই গত সপ্তাহে কিছু দেশি পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজিও বিক্রি করেছি। আমদানি করা পেঁয়াজ ২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু পাইকারিতে যে হারে দাম বেড়েছে তাতে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ২৫ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই।