রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকার ভূমি ব্যবহার, আবাসনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নিতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের। খবর বণিক বার্তার।
চলতি মাসে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এক প্রশ্নের উত্তরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জানান, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ (সংশোধিত ২০১২ ও ২০১৫) অনুসরণ করে আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন চলমান আছে। এ বিধিমালার আওতায় ২০০৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত (২০২২) ১০টি বেসরকারি আবাসন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে রাজউক।
তবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের বিভিন্ন সূত্র থেকে বিধিমালা জারির আগের (১৯৮৪ থেকে ২০০৩ সাল) অনুমোদন দেয়া ২৬টি প্রকল্পেরও তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
১৯৮৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছরে রাজউক ও অন্যান্য সংস্থার (১৯৮৭ সালে রাজউক প্রতিষ্ঠার আগেসহ) অনুমোদিত ভূমি উন্নয়ন প্রকল্প ৩৬টি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ (সংশোধিত ২০১২ ও ২০১৫)-এর বিধি ১৮ অনুযায়ী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি শর্তসাপেক্ষে বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ২০০৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া ১০টি প্রকল্প ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের গোড়ান চটবাড়ি (পল্লবী দ্বিতীয় পর্ব) আবাসিক প্রকল্পের (সংশোধিত ও সম্প্রসারিত এলাকা) ৩৩৫ দশমিক ৪১ একর (জিআইএস ডাটাবেজ থেকে প্রাপ্ত) এবং দুই পর্যায়ে ডিসি অফিস থেকে সাফকবলা দলিলমূলে প্রত্যয়নকৃত ২৮১ দশমিক ৯৯ একর। ইস্টার্ন হাউজিংয়েরই আরেকটি প্রকল্প এ তালিকায় রয়েছে। সেটি হলো জহুরুল ইসলাম সিটি (বনশ্রী নিউ টাউন) আবাসিক প্রকল্পের (সংশোধিত ও সম্প্রসারিত এলাকা) ১০৮২ দশমিক ৪১ একর (জিআইএস ডাটাবেজ থেকে প্রাপ্ত) এবং দুই পর্যায়ে ডিসি অফিস থেকে সাফকবলা দলিলমূলে প্রত্যয়নকৃত ১০০৯ দশমিক ২৩ একর।
এছাড়া নেপচুন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ইউনাইটেড সিটি আবাসিক প্রকল্প (প্রথম পর্ব), যার আয়তন ১১২ দশমিক ৯৭ একর (সেক্টর ১ থেকে ৩), আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের গ্রিন মডেল টাউন আবাসিক প্রকল্প (প্রথম পর্ব) ১৪৮ দশমিক ৭৩ একর (এ থেকে ডি ব্লক পর্যন্ত) রাজউকের বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা অনুযায়ী অনুমোদনপ্রাপ্ত।
এ তালিকায় আরো রয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) লিমিটেডের বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প (এ থেকে এল ব্লক পর্যন্ত) প্রথম পর্ব (সংশোধিত ও সম্প্রসারিত) ও দ্বিতীয় পর্ব (এমএনপি এবং আই এক্সটেনশন ব্লক) ৩৩০১ দশমিক ৮৩ একর (সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট জমি বাদে)। জলসিড়ি আবাসন (প্রাইভেট) লিমিটেডের জলসিড়ি আবাসন প্রকল্প ২১৩৩ দশমিক ৩০ একর (সেক্টর ১ থেকে ১৭)। স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেডের স্বর্ণালী আবাসন প্রকল্প (প্রথম পর্ব সংশোধিত ও বর্ধিত) ১৪৬ দশমিক ৪৫৫ একর (এ থেকে সি ব্লক পর্যন্ত)। স্বদেশ প্রপার্টিজের আরেকটি প্রকল্প সানভ্যালি আবাসিক প্রকল্পও (প্রথম পর্ব) এ তালিকায় রয়েছে। এ প্রকল্পের ৯৬ দশমিক শূন্য ৬ একর (এ থেকে ডি ব্লক পর্যন্ত) ভূমি রাজউক অনুমোদিত। আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের আশালয় আবাসিক প্রকল্প (প্রথম পর্ব) ৭৯ দশমিক ২৯ একর (সেক্টর ১, ২ ও ৩)। এসএম আবাসন লিমিটেডের ঢাকা ভিলেজ আবাসিক প্রকল্প ৩৮ দশমিক ৪৭ একর (এ ও বি ব্লক) ভূমি রাজউক অনুমোদিত।
বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ জারি হওয়ার আগে ১৯৮৪ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২৬টি বেসরকারি আবাসিক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। এর মধ্যে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মিরপুরে অবস্থিত পল্লবী আবাসিক প্রকল্প (প্রথম পর্ব), আরামবাগ কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি (মিরপুর ল্যান্ড প্রজেক্ট), কল্যাণপুর ল্যান্ড প্রজেক্ট, বনশ্রী নিউ টাউন (বনশ্রী ও আফতাবনগর) আবাসিক প্রকল্প, মহানগর প্রকল্প, পল্লবী দ্বিতীয় পর্ব (গোড়ান-চটবাড়ি) আবাসিক প্রকল্প, মিরপুরের শীশমহল ল্যান্ড প্রজেক্ট বাগবাড়ি, মতিঝিলের কেএম দাস লেন আবাসিক প্রকল্প, ধানমন্ডির রায়েরবাজার প্রকল্প, পোস্তগোলা আবাসিক প্রকল্প, সূত্রাপুরে পোস্তগোলা রিভারভিউ ল্যান্ড প্রজেক্ট, সবুজবাগে বাসাবো আবাসিক প্রকল্প ও নিকেতন আবাসিক প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলো ইস্টার্ন হাউজিংয়ের।
এছাড়া মোহাম্মদপুরের বায়তুল আমান কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি প্রকল্প, মোহাম্মদপুর হাউজিং পিসিকালচার অ্যান্ড ফার্মিং কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের হাউজিং প্রকল্প, আদর্শ ছায়ানীড় গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতির হাউজিং প্রকল্প, শিকদার রিয়েল এস্টেটের ধানমন্ডি প্রকল্প, আব্দুর রফিক হাউজিংয়ের প্রকল্প, সুনিবিড় গৃহনির্মাণ সমবায় সমিতির প্রকল্প, তেজগাঁওয়ের মেট্রোপলিটন ক্রিশ্চিয়ান কোঅপারেটিভ হাউজিং প্রকল্প, ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের বারিধারা বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প (প্রথম পর্ব), জনতা হাউজিং কোঅপারেটিভ সোসাইটি প্রকল্প, মিরপুরে মুক্তি আবাসিক প্রকল্প, শেলটেক প্রাইভেট লিমিটেডের মিরপুরে মল্লিকা আবাসিক প্রকল্প, প্রবাল হাউজিংয়ের মোহাম্মদপুরের আবাসিক প্রকল্প ও ক্যাপ হাসন হাউজিং প্রকল্প পাইকপাড়া।
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ (চলতি দায়িত্ব) ও ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যেসব প্রকল্প অনুমোদনহীন আছে, তা যদি ঢাকার মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ থাকে তাহলে দ্রুত অনুমোদন নিতে কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য বলেছি। আমরা কয়েকদিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বা প্রকল্প অনুমোদন আছে সেসব তালিকা জনসাধারণের সুবিধার জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে, যাতে কেউ প্রতারিত না হয়।
বিষয়টি নিয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, রাজউকের অনুমোদন নিয়ে যেসব প্রকল্প হয়েছে সেগুলো ভালো করছে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকেই ব্যবসা করছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জমি না কিনেই প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা করছে। ফলে ওইসব অনুমোদনহীন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জমি কিনে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এসব প্রতারণা সরকারকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। আমরাও বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি।