বুধবার (১৬ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে মেটার পক্ষ থেকে। এতে বলা হয়, অনুদানের পাশাপাশি গ্লোবালগিভিংয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির দুর্যোগ প্রস্তুতি কার্যক্রমেও সাহায্য করবে প্রতিষ্ঠানটি।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাংলাদেশে কমপক্ষে দশ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পাশাপাশি বন্যায় তলিয়ে যায় এক হাজারের মতো চিংড়ির ঘের। মেটার সংকট ও দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া তহবিল থেকে সরাসরি এই অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ-ভিত্তিক উল্লিখিত তিনটি অলাভজনক সংস্থার ত্রাণ এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগেও সাহায্য করবে।
মেটার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ইমার্জিং মার্কেটস-এর ডিরেক্টর জর্ডি ফরনিস বলেন, ‘আমরা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের বিধ্বংসী প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা বাংলাদেশিদের পাশে আছি। আমরা আশা করছি আমাদের পদক্ষেপ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সাহায্য করবে। এই মুহূর্তে আমাদের একত্রিত হয়ে তাদের পুনর্বাসনে সাহায্য করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি পার্টনারদের সঙ্গে মিলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা যায়।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এবং পরে সংযুক্ত থাকার জন্য মানুষ প্রায়ই বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করে। তাই বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর, মেটা ফেসবুকে একটি ক্রাইসিস রেসপন্স পেজ তৈরি করেছে। এর কমিউনিটি হেল্প ফিচার ব্যবহার করে যে কেউ সাহায্যের অনুরোধ করতে পারেন অথবা খাদ্য, আশ্রয় এবং জরুরি স্থানান্তরের মতো সহায়তার প্রস্তাব দিতে পারেন। ফেসবুকে সেফটি চেকও চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের নিজের নিরাপত্তা বিষয়ে জানাতে পারবেন।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল কাজী শফিকুল আলম বলেন, ‘সবাইকে যুক্ত করার পাশাপাশি, মেটার প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক আমাদের ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিক খবরাখবর পেতে সাহায্য করেছে। এতে আমরা মানুষকে সাহায্য করার জন্য সময়মতো কার্যকর সিদ্ধান্তও নিতে পারি। এছাড়াও, মেটার আর্থিক সহায়তা সাইক্লোন সিত্রাং-এর প্রতিক্রিয়ায় আমাদের চলমান কার্যক্রমে সাহায্য করেছে। এর মাধ্যমে আমরা আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি।’
ত্রাণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সংকট মোকাবেলার উদ্দেশ্যে করা ক্যাম্পেইনে সহায়তা করার জন্য মেটা ১০ কোটি ইউ এস ডলারের অ্যাড ক্রেডিটও দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি পরিকল্পনায়ও সাহায্য করবে।
ব্র্যাক-এর ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষরা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এই দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে চলেছে। ঠিক তেমনি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলেও বেশ কিছু উপকূলীয় জেলায় বসতবাড়ি, আবাদী জমি ও মাছের ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। ব্র্যাক জানে যে, দুর্যোগের ঝুঁকি ও দুর্যোগ-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় মেটার উদার সহায়তার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জরুরি প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে।’
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গড় ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশে বছরে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ুর প্রভাবের কারণে আগামী ত্রিশ বছরে ১৩ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি অভ্যন্তরীণ অভিবাসী হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো মেটা প্ল্যাটফর্মে অলাভজনক সংস্থাগুলোর ত্রাণ প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে বিভিন্ন কমিউনিটি এক মিলিয়ন ডলারের বেশি সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও, মেটার ডেটা ফর গুড প্রোগ্রাম, আঞ্চলিক রেসপন্স পার্টনারদের ডেটা সরবরাহ করার জন্য একটি দুর্যোগ মানচিত্র তৈরি করেছে।
মেটার দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এখানে: www.facebook.com/crisisresponse।