২০১৫ সালে ব্যাংক খাতের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জনে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে উল্লেখ করা হয় ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণ (সিআরএআর) সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে এটি বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকলেও সরকারি খাতের পাঁচটি এবং বেসরকারি খাতের আটটি ব্যাংক এটি (সিআরএআর) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের (২০১৯) সেপ্টেম্বর শেষে এবি ব্যাংকের সিআরএআর ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের ৭ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের ১০ দশমিক ০৭ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ঋণাত্মক ১৩১.১১ শতাংশ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ১১ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
অন্যদিকে সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী গড় মূলধন পর্যাপ্ততার হার ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংক।
বর্তমানে, ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে দেশের ১২টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের (২০১৯) সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বেশি।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের প্রভাবে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস শেষে মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে ১২টি ব্যাংক। এই সময়ে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ও বিশেষায়িত খাতের ৭টি, বেসরকারি খাতের ৪টি ও বিদেশি একটি ব্যাংক রয়েছে। একই বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
মূলধন ঘাটতিতে থাকা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। আলোচ্য সমেয় ব্যাংকটির মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৭৮৮ কোটি টাকা। এছাড়াও বেসিক ব্যাংক ৫৬২ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৯৩৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৫৪৬ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংক ২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি তৈরি হলে বাজেট থেকে তার জোগান দিতে হয়। জনগণের করের টাকায় বিভিন্ন সময় মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলোতে অর্থ জোগান দেয় সরকার। তবে করের টাকায় মূলধন জোগানের বরাবরই বিরোধিতা করে থাকেন অর্থনীতিবিদরা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংক লিমিটেডের মূলধন ঘাটতি ৬৫২ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের ৬৯১ কোটি টাকা, কমিউনিটি ব্যাংকের ৩ কোটি টাকা এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা।