বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিমেন্ট শিল্পের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি হতে পারে।
শতভাগ আমদানিনির্ভর এ শিল্পের সমগ্র কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) ভেঙে পড়ায় এ শিল্পের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে দেড় থেকে দু'বছর সময় লেগে যাবে। ফলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্প এক গভীর সংকটের সম্মুখীন। এ শিল্পকে বাঁচাতে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)।
বিসিএমএ’র প্রেসিডেন্ট মো. আলমগীর কবির গত ২৭ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের বরাবর লিখিতভাবে এ প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রস্তাবগুলো হলো- সিমেন্ট শিল্পের জন্য সব ধরনের মেয়াদি ঋণ-লিজ লোন ১২ বছরের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে মাসিক কিস্তি ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ করে দেওয়া, সব ধরনের মেয়াদি ঋণ-লিজ লোনের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বর সময় পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ডের সুযোগ প্রদান এবং ব্যাংক ঋণের ওপর ৯ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করার পর ব্যাংকগুলো যাতে ঋণ নবায়ন ফি, এলসি কমিশন ও নিশ্চিতকরণ চার্জ বৃদ্ধি না করে, তা নিশ্চিত করা।
উদীয়মান সিমেন্ট শিল্পকে অপ্রত্যাশিত আর্থিক দুরবস্থা থেকে রক্ষার জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
লিখিতভাবে আলমগীর কবির আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বলেন, এ ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনার দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আর্থক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা দেশের অর্থনীতিকে সক্রিয় ও কার্যকর রাখতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন। সেজন্য আপনাকেসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, আপনার প্রচেষ্টায় ও পরিশ্রমে করোনার ভয়াল থাবা অতিক্রম করে বাংলাদেশের অর্থনীতির সফলতা অচিরেই পৃথিবীতে দৃষ্টান্ন স্থাপন করতে সক্ষম হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে সিমেন্টের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩ দশমিক ৫ কোটি মেট্রিক টন। অথচ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭ দশমিক ৫ কোটি মেট্রিক টন। তাই আমরা দেশের সমুদয় চাহিদা মিটিয়ে এ বিপুল উৎপাদনের কিছু অংশ ভারতে রফতানি শুরু করেছি, যা বছরে প্রায় ১০ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। করোনার প্রভাবে দেশের যে সমস্ত শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সিমেন্ট শিল্প তার মধ্যে অন্যতম। সিমেন্ট শিল্প একটি ভারী শিল্প অর্থৎ অধিক বিনিয়োগ, অধিক চলতি মূলধন ও অধিক ব্যয়ের একটি শিল্প। সিমেন্ট শিল্প ভলিউমেট্রিক অর্থাৎ বিক্রি বেশি কিন্তু মুনাফা কম। এ জাতীয় শিল্পগুলো স্বল্প সময়ে বন্ধ হলে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে। সরকারের সীমাবদ্ধতার বিষয় বিবেচনায় রেখে আমাদের শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা সরকারের কাছে সরাসরি কোনো আর্থিক প্রণোদনা প্রত্যাশা করি না। তবে এ সময়ে পুঞ্জীভূত লোকসানের কারণে আমাদের নগদ অর্থ কমে যাওয়ার ফলে উৎপাদন খরচ, শ্রমিকদের বেতন ভাতা, ব্যাংকের রিপেমেন্ট ইত্যাদি একসঙ্গে বহন করা দুঃসাধ্য। বিধায় সিমেন্ট শিল্পের ঋণের সময়সীমার ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনার সদয় অবগতির জন্য উল্লেখ্য যে সিমেন্ট শিল্পে কুঋণের পরিমাণ বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় কম। এ শিল্পের মালিকরা দেশের সর্বোচ্চ করদাতা এবং আমদানিকারকদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু পুঞ্জীভূত লোকসানের চাপে এ ধারা ধরে রাখা বর্তমানে অসাধ্য।