জাপান, সৌদি আরব, ইরান একটি করে জয় পেলেও এশিয়ার জায়ান্ট দক্ষিণ কোরিয়া এখনো কাতার বিশ্বকাপে সাফল্যের দেখা পায়নি। উরুগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা পাওলো বেনতোর দল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ ঘানার মুখোমুখি হচ্ছে। ‘এইচ’ গ্রুপে পর্তুগালের সঙ্গে দারুণ লড়াই করেও ৩-২ গোলে হেরে যাওয়া আফ্রিকান প্রতিনিধি ঘানা আছে প্রথম জয়ের খোঁজে। এক জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল। এক ড্রয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু বাংলাদেশ সন্ধ্যা সাতটায়।
তার আগে আল জানুব স্টেডিয়ামে বিকেল চারটায় ওদিকে ‘জি’ গ্রুপ থেকে বাঁচা-মরার ম্যাচে লড়বে ক্যামেরুন ও সার্বিয়া। একটি করে ম্যাচ খেলে এখনো জয়ের দেখা পায়নি কেউ। সুইজারল্যান্ডের কাছে ক্যামেরুন হেরেছে ১-০ গোলে। আর ব্রাজিলের কাছে সার্বিয়ার হার ২-০ ব্যবধানে। অর্থাৎ আজ হারলেই গ্রুপপর্ব থেকে বিদায়, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে ক্যামেরুন ও সার্বিয়া।
লুইস সুয়ারেজদের উরুগুয়ের সঙ্গে সমানতালে লড়াই করে ড্র করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও উরুগুয়ের দুটি শট ক্রসবারে লেগে ফিরে না আসলে ফল অন্য রকম হতে পারত। পুরো ম্যাচে যেভাবে প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণ সামলেছে, তাতে নিজেদের ডিফেন্স নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতেই পারেন কোরিয়ান গুরু বেনতো। গ্রুপের অন্যতম ফেভারিট দলটির সামনে সুযোগ ঘানার বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ২০১০ সালের পর প্রথমবার শেষ ষোলোয় পা দিয়ে রাখার। এশিয়ান টাইগার দক্ষিণ কোরিয়া তাদের শেষ দশ ম্যাচের একটিতে মাত্র হেরেছে, শেষ চার ম্যাচের তিনটিতে একটি গোলও হজম করেনি। এর পেছনে রক্ষণভাগের কান্ডারি কিম মিন জাইয়ের প্রশংসা করতেই হবে।
তবে আক্রমণভাগ নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছে। উরুগুয়ের বিপক্ষে পুরো ম্যাচে একটিও অন টার্গেটে শট নিতে পারেনি তারা। অন্যদিকে, ঘানা কিন্তু পর্তুগালকে ছেড়ে কথা বলেনি। ৬৫ মিনিটে পেনাল্টি শটে পর্তুগালকে এগিয়ে নিয়েছিলেন রোনাল্ডো। ৭৩ মিনিটে ঘানাকে সমতায় ফেরান আন্দ্রে রামি আইয়ু। ৭৮ মিনিটে জাও ফেলিক্সের গোলে ২-১এ এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ৮০ মিনিটে ৩-১ করেন রাফালে আলেক্সসান্দ্রে। ৮৯ মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে ৩-২ করেন ওসমান বুকারি। পর্তুগাল-উরুগুয়ে দিনের শেষ ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, আজ হারলেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে ঘানার।
দক্ষিণ কোরীয় সমর্থক তাদের প্রিয় তারকা সন হেয়ং-মিনের ফিরে আসা ঠিকই উদ্যাপন করেছে। উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রটেকটিভ মাস্ক পরে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দক্ষিণ কোরিয়া-ঘানা এটিই প্রথম ম্যাচ। এর আগে সাতবার ফ্রেন্ডলি ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে চার জয়ে এগিয়ে ঘানা, তিন জয় কোরিয়ার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ২৮ নম্বর দল দক্ষিণ কোরিয়ার এটি ১১তম বিশ্বকাপ। ৬১তম দল ঘানা খেলছে চতুর্থবারের মতো। অন্যদিকে, ‘জি’ গ্রুপে একটি করে ম্যাচ খেলে এখনো জয় না পাওয়া ক্যামেরুন-সার্বিয়ার আজ বাঁচা-মরার লড়াই। হারলেই বিদায় নিশ্চিত। যদিও দুটি দলই নিজেদের প্রথম ম্যাচে হাই-র্যাঙ্কড দলকে মোকাবিলা করেছে। যে কারণে নিজেদের সেভাবে গুছিয়ে নিতে পারেনি। এর আগে তিনটি বিশ^কাপে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে সার্বিয়াকে। এ নিয়ে শেষ ১০টি বিশ্বকাপ ম্যাচের আটটিতেই তারা পরাজিত হয়েছে। কোনো ইউরোপিয়ান দেশ হিসেবে যা সর্বোচ্চ। বিশ্ব সেরার মঞ্চে তাদের সবশেষ জয় এসেছিল ২০১৮ আসরে। সেবার গ্রুপপর্বে কোস্টারিকাকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল দলটি। যদিও বাছাইপর্বে পর্তুগালের মতো দলকে টপকে শীর্ষ স্থান লাভ করেছিল আফ্রিকান ঈগলসরা।
আর ১৯৯০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে খেলার পর আর নকআউটে জায়গা করে নিতে পারেনি ক্যামেরুন। ২০০২ আসরের পর থেকে বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি আফ্রিকান দেশটি। ২০১০ ও ২০১৪ সালে গ্রুপপর্বের সব ম্যাচে হেরে বিদায় নেয় তারা। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইয়ের বৈতরণীই পার হতে পারেনি। বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বশেষ তিন উপস্থিতির প্রতিবারই গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে সার্বিয়া ২০০৬ (সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো হিসেবে), ২০১০ ও ২০১৪ সালে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে ক্যামেরুনের বিপক্ষে খেলবে সার্বিয়া। ফ্রান্স বিশ্বকাপে সার্বিয়া প্রতিনিধিত্ব করেছিল যুগোস্লাভিয়া হিসেবে। দুই দল এখন পর্যন্ত একবারই লড়েছে একে অন্যের বিপক্ষে। ২০১০ সালের প্রীতিম্যাচে ৪-৩ গোলে জিতেছিল সার্বিয়া।
অর্থসংবাদ/কেএ