চলমান সংকটের মধ্যে দেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর নিয়ে আসছে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের মালিকানাধীন মোনার্ক গ্রুপ। রুট গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে প্রথমবারের মতো গড়ে তুলেছে দেশের একমাত্র বেসরকারি টিএসপি সার প্লান্ট ‘গ্রাম বাংলা এনপিকে ফার্টিলাইজার অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেড’। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশে সালফিউরিক এসিডের শতভাগ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, গ্রাম বাংলা এনপিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে চীনের এসইউএমইসি কমপ্লিট ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। আগামী বছরের (২০২৩) মার্চের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ইউরোপ এবং চীন থেকে যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন ও সংযোজন করা হচ্ছে।
আগামী ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে। প্রকল্পটি টিএসপি সার উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতীয় গ্রিড থেকে কোনও প্রকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজন হবে না। প্রকল্পের উৎপাদিত বাই প্রডাক্ট বিদ্যুৎ দ্বারা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রকল্পটির উৎপাদিত পণ্য উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণ এবং পরিবহনের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার চরচাষী এলাকায় স্থাপিত এ কারখানায় প্রধান পণ্য হিসেবে উৎপাদন হবে টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সার এবং এনপিকেএস (মিশ্র) সার। আর উপজাত পণ্য (বাইপ্রডাক্ট) হিসেবে উৎপাদন হবে ফসফরিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, জিপসাম ও বিদ্যুৎ। উদ্যোক্তারা বলছেন, এ কারখানায় প্রতি বছর ১ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার, ৫০ হাজার মেট্রিক টন এনপিকেএস সার, ৩ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন সালফিউরিক এসিড, ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড, দেড় লাখ মেট্রিক টন জিপসাম এবং ৮ মেগাওয়াাট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বিক্রির পরিমাণ হবে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার কৃষি মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার বিদেশ থেকে বিএডিসি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করে থাকে। আমদানিকৃত সার সরকার ভর্তুকি দিয়ে সরকারের অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে দেশের কৃষকদের মধ্যে বিক্রয় ও বিতরণ করা হয়।
বিসিআইসি এর আওতাভুক্ত একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান টিএসপি কমপ্লেক্স চট্টগ্রামের বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ৫০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার, যা দেশের মোট চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
সরকার ওই সার ভর্তুকির আওতায় ক্রয় পূর্বক কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদিত ডিলার দ্বারা কৃষকের নিকট সরবরাহ ও বিতরণ করে থাকে। অবশিষ্ট টিএসপি সারসহ অন্যান্য সার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভর্তুকির আওতায় আমদানি করে দেশের কৃষকদের চাহিদা পূরণ করা হয়।
এ ক্ষেত্রে সরকার পিএসপি কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম হতে ক্রয়কৃত সার এবং বেসরকারীভাবে আমদানিকৃত সারের বিপরীতে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। অর্থ্যাৎ সরকার উভয় ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে।
এনপিকে ফার্টিলাইজার জানায়, কারখানা স্থাপন সম্পন্ন করে উৎপাদনে যেতে পারলে দেশের কৃষকদের টিএসপি সারের চাহিদা সঠিক সময়ে মেটানো সম্ভব হবে। এছাড়াও আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে এবং প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। একইসঙ্গে দেশে প্রচুর পরিমান কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হবে। উৎপাদিত টিএসপি সার এর গুনগত মান আন্তজার্তিক মান সম্পন্ন এবং আমাদের সরকার কর্তৃক মানদন্ড বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
উৎপাদিতত সারের গুণগত মান আমদানিকৃত টিএসপি সারের তুলনায় সমমান ও উন্নত হলে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকেও সরকারের ভর্তুকির আওতায় অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে এনপিকে ফার্টিলাইজার।
উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন তারা। দেশের মোট চাহিদার ১২ শতাংশ পুরণ করতে পারবে এই প্রকল্প। এছাড়াও দেশের সালফিউরিক এসিডের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।
এ বিষয়ে কোম্পানির ব্যস্থাপনা পরিচালক রাজ্জাকুল হোসেন বলেন, সারা বিশ্ব এখন কঠিন সময় পার করছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এমন সময়ে বিশাল বিনিয়োগ নিয়ে আসছি আমরা। আমাদের এই প্রকল্প দেশের কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আমাদের এই প্রকল্প দেশের টিএসপি সারের ১২ শতাংশ চাহিদা পূরণ করবে।