দশ বছর আগে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দরনগরীর উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। ছয় বছর পর ২০১৮ সালে পটিয়ার জনসভায় সেই দায়িত্বের কথা মনে আছে জানিয়ে কিছুটা সময় চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্ধারিত সময়েই চট্টগ্রাম উন্নয়নের সব প্রকল্প শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন বলে মনে করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দশ বছর পর আজ তিনি যে চট্টগ্রামে আসছেন, সেটা উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া এক নতুন বন্দরনগরী। যার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন দশ বছর আগে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন।
দেশে উন্নয়ন হয়নি, বাংলাদেশ শ্রীলংকার পথে যাচ্ছে-দাবি করে বিএনপি নেতারা সারা দেশ ঘুরে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামার ডাক দিচ্ছেন। এমন একটি সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামবাসীকে তাদের নিজের আয়নায় দেখাবেন উন্নয়নের বাস্তব চিত্র। সেই আয়োজনেই আজ তিনি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আসছেন। বিকালে ভাষণ দেবেন ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায়। সেখানে চট্টগ্রামের উন্নয়নে গৃহীত সব প্রকল্পের চিত্র এক এক করে তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করেছে। দেড় মাস আগে (১২ অক্টোবর) এই পলোগ্রাউন্ড মাঠেই বিএনপির জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এ সরকারের সমালোচনা করে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি তুলে ধরতে এবং বিএনপির ‘মিথ্যাচার’র জবাব দিতে সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশ সফরের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে চট্টগ্রামে জনসভায় আজ ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে ৩০টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি। এছাড়া আজ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ৮৩ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২২’-এ যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২৪ নভেম্বর তিনি যশোরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করেন। ৭ ডিসেম্বর সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে আরেকটি জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তার এই জেলা ও মহানগর সফর কর্মসূচি চলতেই থাকবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
ব্যাপক প্রস্তুতি : দীর্ঘ দশ বছর পর বন্দরনগরীতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই প্রস্তুতির যেন শেষ নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলো পলোগ্রাউন্ড মাঠের এই জনসভা সফল করতে গত এক মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। গোটা বন্দরনগরী সেজেছে নতুন রূপে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে স্মরণকালের বৃহৎ জনসভায় রূপ দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম করা প্রস্তুতি শেষ। এই জনসভাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। পুরো শহরে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। ব্যানার-ফেস্টুন আর তোরণের নগরীতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই প্রস্তুতি দেখতে এক সপ্তাহ আগে থেকেই চট্টগ্রাম অবস্থান করছেন। শনিবার সকালে শীর্ষ নেতারা মাঠ পরিদর্শন করে সর্বশেষ প্রস্তুতির বিষয়টি পরখ করেন।
মাঠ পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামজুড়ে ব্যাপক সাড়া জেগেছে, মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করছি পলোগ্রাউন্ডের মাঠ পূর্ণ করে মাঠের বাইরে আরও আট-দশগুণ মানুষ হবে।
চট্টগ্রামে এ সরকারের মেয়াদের উল্লেখযোগ্য প্রকল্প : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৪ বছরে চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। নগরীতে তিনটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। বহদ্দারহাট থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত ৬ লেনের সংযোগ সড়ক হয়েছে। কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে রিংরোড, মেরিনড্রাইভ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। মীরসরাইয়ে ৩০ হাজার একর জমিতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্ক। দোহাজারি থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষের পথে। চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান। ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ কাজও শেষের পথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই টানেলের প্রথম টিউবের উদ্বোধন করেছেন ২৬ নভেম্বর। চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সমীক্ষার জন্যও প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন।
কালুরঘাট সেতু নির্মাণ ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ফোরলেনে উন্নীত করার দাবি : আজকের জনসভা থেকে চট্টগ্রামবাসী সুনির্দিষ্টভাবে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ফোরলেনে উন্নীত করার ঘোষণা প্রত্যাশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
যে ৩০ প্রকল্প আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জনসভা থেকে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রকল্পই বেশি রয়েছে। যে চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে মীরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ। আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমির আধুনিকীকরণ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামের বিপিসি ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
অর্থসংবাদ/কেএ