দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে চাঙাভাব থাকলেও স্বস্তি নেই বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের। গত মাসে প্রতিবেশী দেশ ভারতের শেয়ারবাজারের সূচক সর্বোচ্চ অবস্থানের রেকর্ড গড়েছে। দেউলিয়া রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার শেয়ারবাজারেও গত এক মাসে উত্থান হয়েছে। তবে উল্টো চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে। এক মাসে প্রায় ২০০ পয়েন্ট হারিয়েছে দেশের শেয়ারবাজার, ধারাবাহিকভাবে কমছে লেনদেনও।
জানা গেছে, দেউলিয়া রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার শেয়ারবাজার কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক ‘এএসপিআই’ এক মাসে ২৫৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সিএসইর দেওয়া তথ্য বলছে, গত ৪ নভেম্বর ‘এএসপিআই’ সূচকের অবস্থান ছিল ৮ হাজার ৫১১ পয়েন্টে। কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে গত শুক্রবার (২ ডিসেম্বর)। ওইদিন লেনদেন শেষে সূচকটি দাঁড়ায় ৮ হাজার ৭৬৯ পয়েন্টে।
পাকিস্তানের শেয়ারবাজার করাচি স্টক এক্সচেঞ্জেও গত এক মাসে সূচকের উত্থান হয়েছে। এক মাসে এক্সচেঞ্জটির ৫৮৫ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। নভেম্বরের প্রথম কার্যদিবসে করাসি স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ‘কেএসই ১০০’ ছিল ৪১ হাজার ৮০৮ পয়েন্ট। ২ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে সূচকটি ৪২ হাজার ৩৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ভারতের বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ‘সেনসেক্স’ গত মাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে। গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো ৬৩ হাজার পয়েন্ট স্পর্শ করে। যদিও শুক্রবারের পতনে সূচকটি ৬৩ হাজারের নিচে নেমে আসে।
বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, এক মাসে এক্সচেঞ্জটির সূচক ‘সেনসেক্স’ ১ হাজার ৯১৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ৬০ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) লেনদেন শেষে সূচকটি ৬২ হাজার ৮৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিকে নভেম্বর মাসজুড়ে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ছিল ৬ হাজার ৪১৫ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। আজ (রবিবার) লেনদেন শেষে সূচকটি অবস্থান দাঁড়ায় ৬ হাজার ২২৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে।
শরীয়াহ ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএসই এস’ এক মাসে (৬ নভেম্বর-৪ ডিসেম্বর) ১ হাজার ৪০৫ পয়েন্ট থেকে ১ হাজার ৩৬৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এছাড়াও বাছাই করা কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএস ৩০’ ২ হাজার ২৫৮ পয়েন্ট থেকে ২ হাজার ২০৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
গত মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে টাকার অংকে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেও ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন নেমে এসেছে ৪০৪ কোটি টাকায়। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ২ হাজার ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।
শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়া বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম গত ২৬ নভেম্বর অর্থসংবাদকে বলেছিলেন, অর্থনীতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দার পরিস্থিতি বাংলাদেশেও পড়বে- বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন ধারণা আছে। যদিও আমাদের অর্থনীতি তুলনামূলক ভালোই আছে, এবং আমরা আশা করছি আরও ভালো হবে। তারল্য সংকট আছে বিষয়টি এমন নয়।
তিনি বলেন, যারা বিভিন্ন সময় সেল করেছে, তাঁরা এখন বাই মুডে নেই। তাদেরকে শেয়ার ক্রয়ে উৎসাহিত করতে কমিশন কাজ করছে। পলিসি লেভেলে কোন সাপোর্ট দেওয়া যায় কি না সেটিও চেষ্টা করছি। কোনভাবে যেন ফোর্সসেল না আসে কমিশন সেটিও দেখছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী যারা আছে, ব্যাংক এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, তাদের বন্ড ইস্যু করতে দিচ্ছি। আশা করি আগামীতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে। ব্যাংকগুলোর পারপেচ্যুয়াল বন্ড, সাববন্ড অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের সাথে মিটিং করে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে।
বিএসইসির মুখপাত্র আরও বলেছিলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে এমন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকেও বর্তমান পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছি। এছাড়াও ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসফ) থেকে আইসিবিকে ভালো পরিমাণের অর্থ দেওয়া হয়েছে বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য। সিএমএসএফ থেকে আরও একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড করা যায় কি না সেটিও পর্যালোচনা চলছে। আমরা আশা করছি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের স্বার্থে পজিটিভ ভূমিকা পালন করবেন। আশা করছি বিজয়ের মাসে (ডিসেম্বরে) সূচক ও লেনদেন তথা বাজার ঊর্ধ্বমূখী থাকবে।
ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি’ রোজারিও মনে করেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাবই বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। সম্প্রতি তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, বৈশ্বিক অবস্থা, অর্থনীতির কারণে মানুষ অস্থির হয়ে গেছে। এতগুলো শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকলে লেনদেন কিভাবে হবে? সে তুলনায় লেনদেন ঠিকই আছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক হলে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।