শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় প্রায় ১৩ গুণ বেশি ঋণ রয়েছে। এছাড়াও কোম্পানিটির ঋণের বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ ৭ ভাগের এক ভাগ। একইসঙ্গে কোম্পানির বাৎসরিক আয়ের তুলনায় ৭ গুণেরও বেশি সুদের পরিমাণ। ডিএসইতে দেওয়া তথ্য ও ২০২১ সালের কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে বিষয়টি উঠে এসেছে।
সূত্র মতে, ২০০৬ সালে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৯৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বর্তমান শেয়ারদর অনুযায়ী কোম্পানিটির বাজারমূল্য ৩২৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। কিন্তু কোম্পানিটি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দেওয়া তথ্য বলছে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড স্বল্প-মেয়াদি ঋণ গ্রহণ করেছে ১ হাজার ৩৪৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ৮ শতাংশ হারে হিসাব করলেও এক বছরে কোম্পানিকে শুধুমাত্র সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৫৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। কিন্তু কোম্পানির ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এক বছরে কোম্পানিটি কর পরবর্তী আয় করেছে ৮ কোটি ২৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বছরে ৮ কোটি টাকা আয় করে ৫৯ কোটি টাকা সুদ কিভাবে পরিশোধ করবে সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির আয়ের সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সামঞ্জস্য না থাকলে প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
জানা গেছে, গত চার বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের সম্পদের পরিমাণও কমছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১৯ টাকা ৪৬ পয়সা। আর মোট সম্পদের মূল্য ছিল ১৯১ কোটি ৪৩ লাখ ১ হাজার ৬০৬ টাকা। অপরদিকে কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ জুন, ২০২২ ইং তারিখে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ছিল ১৮ টাকা ৫৬ পয়সা। এ হিসেবে ২০২২ সালে কোম্পানির সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮২ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ হাজার ৬১৬ টাকায়।
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এস আলম কোল্ড রোল্ড যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তা কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি। আর কোম্পানির বর্তমান সম্পদ মূল্যের তুলনায় ঋণের পরিমাণ ৭ গুণের বেশি।
জানতে চাইলে এস আলম কোল্ড রোল্ড মিলস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মো. সোহেল আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, এস আলম কোল্ড রোল্ড পাবলিক কোম্পানি, সব ডিটেইলস দেওয়া আছে, দেখে নিন। শতকোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ পেতে পারে কি না- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিতে রাজি হননি।
কোন কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি ঋণ পেতে পারে কি না- এমন তথ্য জানতে চাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আল আমিনের কাছে। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, ব্যাংকগুলো ইক্যুইটি ডেট রেশিও বিবেচনা করে কোম্পানিগুলো ঋণ দেয়। এতো বেশি পরিমাণ ঋণ দেওয়ার জন্য কোম্পানির সম্পদ আছে কি না ব্যাংক সেগুলো পর্যালোচনা করে।
পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় ঋণের পরিমাণ বেশি হলে বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে অন্যদের পরামর্শ নিয়ে বিনিয়োগ করে থাকেন। তবে কোন শেয়ার কিনতে কেউ তাদের জোর করে না। তাঁরা অনেক সময় কোন কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং, ঝুঁকি ইত্যাদি না দেখেই বিনিয়োগ করেন। তাই ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত সঠিক হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এস আল কোল্ড রোল্ড স্টিল মিলস লিমিটেড। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৫৩ দশমিক ০৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা।