ডিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে চীনা ভাষা, লেনদেনে জটিলতা

ডিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে চীনা ভাষা, লেনদেনে জটিলতা

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে ইংরেজি ভাষার পরিবর্তে চীনা ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে লেনদেনে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা। এছাড়াও শেয়ার লেনদেনের আপডেট না দেওয়ার কারণে বিক্রি করা শেয়ারও গ্রাহকের বিও হিসাবে রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


সূত্র জানায়, ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে বেশকিছু ত্রুটির কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে একাধিকবার ই-মেইল করা হয়েছে।


জানা গেছে, গত সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ডিএসইতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। এর ফলে শেয়ার লেনদেনের তথ্য আপডেট করা যায়নি। ফলে ৫ ডিসেম্বর ব্রোকারেজ হাউজগুলো যে শেয়ার বিক্রি করেছে, সেগুলোও গতকাল (মঙ্গলবার) বিও হিসাবে রয়ে গেছে। এর কারণে অনেক ব্রোকারেজ হাউজে শর্টফল হয়েছে।


শর্টফল ছাড়াও ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে ভাষাগত সমস্যার ঘটনাও ঘটেছে। মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) থেকে ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে ইংরেজি ভাষার পরিবর্তে চীনা ভাষা লক্ষ্য করা গেছে। এর ফলে লেনদেনের ক্ষেত্রে শেয়ার সংখ্যা বুঝতে পারছে না ব্রোকারেজ হাউজগুলো।


গতকাল ডিএসইর আইটি বিভাগের অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্টের ইনচার্জ ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে শেয়ার লেনদেনের আগে ব্যাক অফিস সিস্টেম সফটওয়্যার চেক করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ভাষাগত সমস্যার কারণে আজ বুধবারও ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ই-মেইলে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ডিএসই। শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের সংখ্যা চীনা ভাষায় প্রদর্শিত হওয়ার কারণে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে অর্ডার পেইজ চেক করে লেনদেন করতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়।



ডিএসইর শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর একাধিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অর্থসংবাদকে জানান, প্রতিদিনই ডিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের ভাষাগত সমস্যার কারণে বাই-সেলের সংখ্যা বোঝা যাচ্ছে না। এছাড়াও সোমবারের শেয়ার লেনদেনের তথ্য আপডেট না হওয়ায় গতকাল শর্টফল হয়েছে।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, ভাষাগত পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু জানা নেই। না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।


জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, লেনদেনের তথ্য আপডেট না হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। ভাষাগত ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়েও কিছু জানি না।


সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শুভ্র কান্তি চৌধুরী বলেন, ডিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে সমস্যা থাকলে সেটা তাঁরা বলতে পারবে। সিডিবিএলের জটিলতার কারণে ট্রেডিং প্লাটফর্মে সমস্যা হচ্ছে, এটা জানা নেই।


প্রসঙ্গত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি নতুন নয়। এর আগেও জটিলতার কারণে গত ২৪ অক্টোবর বেলা ১০টা ৫৮ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায় লেনদেন। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ১০ মিনিট থেকে আড়াইটা পর্যন্ত মাত্র ২০ মিনিটের জন্য লেনদেন চালু করে ডিএসই। ওইদিন লেনদেন শেষে নিজেদের ওয়েবসাইটের লেনদেনের হিসেবের সঙ্গে ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের হিসাবের গরমিল দেখা যায়।


২৪ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওইদিন এক্সচেঞ্জটিতে ৩৩৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে একইদিন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের পরিমাণ আরও বেশি দেখায়।


সংশ্লিষ্ট সূত্র অর্থসংবাদকে জানিয়েছিল, ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের পরিমাণ দেখানো হয় ৫৫৪ কোটি টাকা। যা ডিএসই’র ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের চেয়ে ২১৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা বেশি ছিল।


এছাড়াও ২৪ অক্টোবর মেট্রো স্পিনিং মিলসের মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। অপরদিকে ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে মেট্রো স্পিনিংয়ের শেয়ার লেনদেনের সংখ্যা দেখানো হয় ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫টি।


দুই প্ল্যাটফর্মে দুই ধরণের তথ্যের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তবে ডিএসই জানিয়েছিল ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যই সঠিক।


সাধারণত ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে লেনদেনের বিস্তারিত হালনাগাদ করা হয়। তবে ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের তথ্য এবং ডিএসই’র তথ্যে বিস্তর ফারাক থাকায় সোমবারের লেনদেনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।


ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে যে তথ্য দেওয়া হয়, সেখানে ৫৫৪ কোটি টাকা লেনদেন দেখানো হয়েছে। অথচ যখন ডিএসইতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয় তার আগে পর্যন্ত লেনদেন ছিল ২০০ কোটির সামান্য বেশি। আর কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে দুপুর ২টা ১০ মিনিট থেকে ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মাত্র ১৫ মিনিটে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আদৌ লেনদেন করা সম্ভব কি না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন ছিল বাজার সংশ্লিষ্টদের।


অর্থসংবাদ/ওয়ালিদ

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত