চলনবিলের সর্বোত্তম ব্যবহারে মহাপরিকল্পনা, ব্যয় ১৪ কোটি

চলনবিলের সর্বোত্তম ব্যবহারে মহাপরিকল্পনা, ব্যয় ১৪ কোটি

দেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিল। এটি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও ফসলের অন্যতম ভাণ্ডার। উত্তর জনপদের এক সেরা প্রাকৃতিক সম্পদ এটি। বিলটি রাজশাহী, নটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের এলাকাজুড়ে বিস্তীর্ণ। দেশের সর্ববৃহৎ এই বিলটি একসময় বছরের ৯ মাস ডুবে থাকত। রূপ ধারণ করতো সমুদ্রের মতো। পলি জমে চলনবিল এখন আগের মতো নেই। চলনবিল তার বিশাল জলরাশির ঐতিহ্য হারিয়েছে। এর তলা উন্মোচিত হয়েছে। বিলের ভূমি ও পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে নেওয়া হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমীক্ষা চালানো হবে, এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। প্রাথমিকভাবে ‘চলনবিল এলাকার পানি ও ভূমি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং জীবনযাত্রার মানের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর।





জানুয়ারি ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য চলনবিল এলাকার পানি ও ভূ-সম্পদ মডেলের মাধ্যমে বুদ্ধিদীপ্ত ও সমন্বিত ব্যবহার করে জলাশয়ের জীববৈচিত্র্য এবং উৎপাদন সক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা প্রণয়ন।





এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) গাজী মিজানুর রহমান জানান, চলনবিলের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। এটা এখনও প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। চলনবিলের সমন্বিত পরিকল্পনার উদ্যোগ পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।





প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হলো: চলনবিল নেচার বেজড সলুশনের ভিত্তিতে স্থিতিশীল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন; বিল এলাকার উন্নয়ন ক্ষেত্রভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ ও সমস্যার কারণ নিরুপণ করা। বিল এলাকায় যোগাযোগসহ পানির উৎস্য চিহ্নিতকরণ ও চাহিদাভিত্তিক পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিরুপণ এবং নেচার বেজড সলুশনের জন্য শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত কার্যক্রম চিহ্নিতকরণ করা হবে। ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-নিম্নস্থ পানির ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারের পদ্ধতি চিহ্নিতকরণ, জলাভূমি,খাল,নদী খননের স্থান চিহ্নিতকরণও করা হবে।





মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে মধু, মাছ ও ফসলের আরও উৎপাদন বাড়বে বলে দাবি বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর।





বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, ১৮২৭ সালে চলনবিলের আয়তন ছিল ৫০০ বর্গমাইলের ওপর। তবে ১৯০৯ সালে চলনবিলের আয়তন কমে ১৪২ বর্গমাইল হয়। এর মধ্যে ৩৩ বর্গমাইল এলাকায় সারা বছর পানি জমে থাকতো। চলনবিল তার পানির স্রোতধারা ও নাব্য হারিয়ে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। কার্তিক- অগ্রহায়ণ মাসে চলনবিল অঞ্চলের পানি নেমে গেলে সমতল ভূমি জেগে ওঠে। তখন ওই সমতল ভূমি বা জমিতে চাষ হয় সরিষা, রসুন, কালাই, ধান, লাউ, কপি, আনাজ, গাজর, বেগুন, শসা, ক্ষিরাসহ নানা প্রকার রবি ফসল। এরপর এলাকার কৃষকেরা প্রস্তুতি নেয় বোরো ধান চাষে। পৌষ-মাঘ মাসেই ধানের চারা লাগানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। কৃষি উৎপাদনে সেচের জন্য কৃষকরা ব্যবহার করছেন ভূগর্ভের পানি। বৈশাখ মাসেই ধান কাটা শুরু হয়। শুধু ধানই নয়, অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আবাদ হয় নানা প্রকার শাকসবজি।





চলনবিলে মাছ, সরিষা, মধু উৎপাদনসহ নানা প্রকার মৌসুমি ফসল ফলছে। তবে উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থার অভাবে প্রতি বছর চাষিরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব কারণেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। যাতে করে চলনবিলের সর্বোত্তম ব্যবহার করে অর্থনৈতিক মুক্তি পেতে পারে চলবিল পাড়ের জনজীবন।





জানা যায়, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, নওগাঁ জেলার রানীনগর, আত্রাই, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বেড়া এবং বগুড়া জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। হারিয়ে যাচ্ছে বিলের চিরচেনা রূপ, যৌবন আর ঐতিহ্য। শুষ্ক মৌসুমের আগেই বিল নদী খাড়ি শুকিয়ে জেগে উঠেছে দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ। সেই মাঠে এখন রসুন, পেঁয়াজ, সরিষা, মিষ্টিকুমড়া, গাজর, লাউ, সিমসহ নানা প্রকার শাকসবজি আবাদ হচ্ছে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত শাকসবজি, মধু, কাঁকড়া, শুঁটকি ও কুঁচিয়া চাষ হচ্ছে। থাইল্যান্ড, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে রফতানি হচ্ছে। চলনবিলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও মৎস্যসম্পদ এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছে।





অর্থসংবাদ/এসএম


আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ