বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। তবে করোনা মহামারীর প্রভাব শিথিল হওয়ার পর ইউরোপের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারেও রফতানি বাড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জাপানের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় দেশটিতে রফতানি লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) জাপানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ৩৮ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আলোচ্য মাসে জাপানে ৬০ কোটি ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের একই সময় যা ছিল প্রায় ৪৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পোশাক খাত নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইপিবি বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অপ্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি ২৪৭ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৩১৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে মালয়েশিয়ায় রফতানি ১০০ দশমিক ২১ শতাংশ, মেক্সিকোয় ৪৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ভারত ৪৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ব্রাজিলে ৪৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া ৩০ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে যুদ্ধের প্রভাবে রাশিয়ায় ৫০ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমেছে।
পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীন-প্লাস-ওয়ান নীতির কারণে জাপান চীনের বাইরে থেকে পোশাক আমদানির দিকে ঝুঁকছে। ফলে নিয়মেও এনেছে কিছু শিথিলতা। অন্যদিকে জাপানের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে জাপানি ক্রেতারা মানের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। তারা প্রতিটি পণ্য পরীক্ষা করে। রফতানিকারকদের কাজের মান এবং নির্ধারিত সময়ে সরবরাহের সক্ষমতা যাচাই করে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বৃহৎ দেশগুলোয় আমাদের রফতানি ভালোভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার প্রবৃদ্ধি হয়েছে। স্পেন ও ফ্রান্সেও বেড়েছে অনেক। ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনেও অনেক বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিটি বড় বাজারেই আমাদের রফতানি অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও আমাদের রফতানি অনেক বেড়েছে। তার মধ্যে মালয়েশিয়ায় ১০০ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে অপ্রচলিত বাজারগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সেখানে লিড টাইম থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই সুবিধা পাচ্ছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের ক্রেতা দেশগুলোও অর্থনৈতিকভাবে বিপদগ্রস্ত ছিল। সে জায়গা থেকে আমাদের প্রতিযোগী অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছি। আশা করছি গোটা বিশ্বে অর্থনীতি যখন ভালোর দিকে যাবে তখন আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা আরো বেশি সুবিধা পাব। তখন আমরা দুই গুণের বেশি গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি) করতে পারব বলে আমি মনে করি।
ইপিবি পরিসংখ্যান অনুসারে, জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৮১ কোটি ডলার থেকে ৯০৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে রফতানি ২৭১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। স্পেন ও ফ্রান্সে রফতানি বেড়েছে যথাক্রমে ১৯ দশমিক ১৫ এবং ৩৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের মধ্যে ইতালিতে ৫০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, অস্ট্রিয়ায় ৪৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং সুইডেনে ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। তবে পোল্যান্ডে ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ কমেছে।
জুলাই-নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪৭ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি। এছাড়া যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রফতানি যথাক্রমে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ৩০ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে।