বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে মাথাপিছু মুরগির মাংস খাওয়ার পরিমাণ অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কিনা এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সামাজিক গণমাধ্যমে অনেক প্রচার দেখা যায় যে, ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ফলে জনগণের মধ্যে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়। ফলে ব্রয়লার শিল্পের ওপর একটি বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন ও উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে গবেষণাটি করা হয়। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে, কম্পোজিটে (কলিজা, কিডনি ও গিজার্ডের সমন্বয়) এবং মুরগির খাদ্যে কী পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারি ধাতু আছে তা নির্ণয় করা। গবেষণার জন্য ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশালের ব্রয়লার খামার এবং বাজার থেকে ব্রয়লারের মাংস, হাড়, কম্পোজিট ও ব্রয়লার খাদ্যের নমুনা এবং ঢাকার তিনটি সুপারশপ থেকে ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত প্রায় ১ হাজার ২০০টি ব্রয়লার মুরগি এবং ৩০টি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য থেকে ৩১৫টি নমুনা প্রস্তুত করে বহুল ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক এবং তিনটি ভারি ধাতুর অবশিষ্ট অংশের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।
মোট ১০টির মধ্যে ৭টি অ্যান্টিবায়োটিক (এনরোফ্লক্সাসিন, সিপরোফ্লক্সাসিন, নিওমাইসিন, টাইলোসিন, কলিস্টিন, অ্যামোক্সাসিলিন ও সালফাডায়াজিন) পরীক্ষণের জন্য নমুনাগুলো এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ভারতের চেন্নাইয়ে এসজিএস ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। অবশিষ্ট তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং তিনটি ভারি ধাতু পরীক্ষার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আধুনিক ল্যাবে পাঠানো হয়।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, গবেষণায় পাওয়া ফলের ভিত্তিতে দেখা গেছে— ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে ও কম্পোজিটে মূলত দুটি অ্যান্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসিইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং তিনটি ভারি ধাতুর (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে, যা স্বাভাবিক এবং তা সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার অনেক নিচে।’
মন্ত্রী বলেন, নমুনায় বাজারের তুলনায় সুপারশপ থেকে সংগ্রহ করা মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারি ধাতুর উপস্থিতি অনেক কম।
এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, সুপারশপে যেসব পোলট্রি মুরগি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর ড্রেসিং মানসম্পন্ন এবং পৃথকভাবে বাছাই করা হয়। কিন্তু বাজারে একটি পাত্রে অসংখ্য মুরগি ড্রেসিং করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব নাহিদ রশীদ ও কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার উপস্থিত ছিলেন।