প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) নেওয়ার সময় ডলারের বিনিময় হার ছিল ১ ডলার সমান ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। ডলারের বিনিময় হারের ঊর্ধ্বগতির কারণে মালামাল/সেবা গ্রহণের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় এলসি মূল্য পরিশোধে অতিরিক্ত ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া মূল ডিপিপিতে আয়কর (এআইটি) ও পেট্রোবাংলার ব্যবস্থাপনা সেবা খাত অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এ দুটি খাত অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যয় বাড়বে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প সংশোধন প্রসঙ্গে বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও আইসিটি) প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, শরীয়তপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প চলমান। আশা করি ফেব্রুয়ারিতে খননকাজ শেষ হবে। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে।
ওই কূপ থেকে কী পরিমাণ গ্যাস মিলবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কূপ খনন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ সংশোধন করা হবে। যেমন খননকাজে যে জিনিস ৯৫ টাকায় কিনেছি, তা এখন ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে নির্মাণ কাজে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কূপ খনন শেষে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য তেল/গ্যাস আবিষ্কৃত হলে গ্যাস উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেবে বাপেক্স। শরীয়তপুর-১ কূপে ৩২০০ (১০০) মিটার গভীরতায় খনন, পরীক্ষণ এবং কমপ্লিশনের মাধ্যমে ৭৩.৮ বিসিএফ গ্যাস মজুত বৃদ্ধি এবং দৈনিক গড়ে ৫ থেকে ১০ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন করা হবে।
গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) ও কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে বৈদেশিক মুদ্রায় ৫৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকাসহ মোট ৯৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি ২০২১ সালের ১৭ জুন অনুমোদন হয়। এরইমধ্যে কূপটিতে ১ হাজার ১৭ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এবার প্রকল্প মেয়াদ ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে জুন, ২০২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাপেক্স জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রিগ পরিবহন ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি করা মালামাল পরিহনের জন্য প্রকল্পে সংস্থান ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর পরিবর্তে ৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া বৈদেশিক মালামাল ও সেবা ক্রয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাংক চার্জ, পিএসআই ফি, সিঅ্যান্ডএফ কমিশন, বন্দর চার্জ ও বিমা খাতে মোট ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। তবে চুক্তিমূল্য কম পাওয়ায় কিছু খাতে যেমন ডিএসটি, সারফেস টেস্টিং ও স্লিক লাইন সার্ভিস খাতে ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় কমবে। এছাড়া ডলারের বিনিময় হারের ঊর্ধ্বগতির কারণে আরডিপিপিতে নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ২ কোটি ২ লাখ টাকাসহ ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্রাইস কনটিনজেন্সি খাতের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মূল প্রকল্পে মোট ৯৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার স্থলে সংশোধিত ডিপিপিতে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। আরডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় হিসেবে গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে ৯৫ কোটি ৮৫ লাখ ও বাপেক্সের নিজস্ব ফান্ড থেকে ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাপেক্স আরও জানায়, খননকালে কোনো টুলস কূপে বিনষ্ট হলে লস্ট ইন হোল পেমেন্ট প্রযোজ্য হয়। কিন্তু ওয়্যার লাইন লগিং সার্ভিস গ্রহণের জন্য স্বাক্ষরিত চুক্তিতে এ সংক্রান্ত কোনো বিধি উল্লেখ না থাকায় প্রকল্প থেকে এ খাতটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে বিবিধ যন্ত্রপাতি খাতের আওতায় চেইনটং, কেসিংটং, পাইপরেঞ্চ, হাইড্রলিক হোস, সার্কুলেটিংহোসসহ বিভিন্ন সেফটি ইকুইপমেন্ট কেনা হবে। আমদানি করা এসব মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের জন্য প্রক্রিয়াধীন। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির জন্য এ খাতে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) লাঙ্গলবন্দ-মাওয়া, জাজিরা-টেকেরহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান। ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে ওই পাইপলাইন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
শরীয়তপুর-১ কূপে পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া গেলে লাঙ্গলবন্দ-মাওয়া-জাজিরা পাইপলাইনের জাজিরা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর-১ কূপ পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন দ্বারা সংযোগ স্থাপন করা হবে।
বাপেক্স জানায়, বর্তমানে প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।