‘জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ১০০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই’

‘জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ১০০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই’
জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ১০০ শতাংশে উন্নীত করতে চান বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. আব্দুল হালিম।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারস, চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

বিএসইসি কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও বড় হবে৷ জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ২৩ শতাংশ। আমরা এটা ১০০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই৷ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ২০২৩ সালকে খুব চ্যালেঞ্জিং বছর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। প্রত্যেক চ্যালেঞ্জের ভিতরেই অপরচুনিটি থাকে৷ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই চ্যালেঞ্জকে অপরচুনিটিতে রূপান্তর করতে হবে৷

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখার মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে বৃহত্তর পরিসরে উপস্থাপন করাই হচ্ছে বিএসইসি’র লক্ষ্য৷ এই লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য যে কোন ভাল পরামর্শকে বিএসইসি স্বাগত জানায়৷ পুঁজিবাজারের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চাই৷

তিনি আরও বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে আমাদের কঠোরও হতে হয়৷ যিনি অনিয়ম করবেন বা পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করবেন তারা শুধু নিজের ক্ষতিই করেন না, তাদের কারণে সমগ্র পুঁজিবাজারই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে৷ তাদের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী যেটুকু কঠোর হওয়া প্রয়োজন কমিশন ততটুকু ভূমিকা পালন করবে। আমরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে পুঁজিবাজার উন্নয়নকল্পে কাজ করে যেতে চাই৷

ট্রেকহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে মো. আব্দুল হালিম বলেন, ট্রেকহোল্ডারদের অনেকে দেশে থাকেন না। তাঁদের বিশ্বস্ত কর্মচারীর মাধ্যমে তারা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ফলশ্রুতিতে কিছু সমস্যা ও অনিয়ম দেখা দেয়৷ এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আপনাদের বুদ্ধি, মেধা ও শ্রম দিয়ে পুঁজিবাজারে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজেদের মুনাফাও সুনিশ্চিত করতে হবে৷ আর তাই আপনাদের নিজেদের কর্মকর্তাদের প্রতি আরো নজর দিতে হবে৷ প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউজকে সেল্ফ কমপ্লায়েন্ট হতে হবে, বিএসইসি কর্তৃক প্রদত্ত আইন-কানুনের যথাযথ পরিপালন, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, অডিটেড রিপোর্ট জমা দেয়া ইত্যাদি কাজ সুষ্ঠভাবে পরিপালন করতে হবে৷ যাতে আইনের কোন ব্যতয় না ঘটে সেদিকে নজর দিতে হবে৷

তিনি আরও বলেন, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলো ট্রেক-হোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করছে তা আমাদের জানান৷ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি আপনাদের স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত হয় সে বিষয়টিও আমরা দেখব৷ প্রতিকূল পরিবেশের একটা ইতিবাচক দিক হলো অনেক ভালো ভালো উদ্ভাবনী বিষয়বস্তু এর মাধ্যমেই আসে৷ এই প্রতিকূল পরিবেশকে অতিক্রম করার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা কমিশন গ্রহণ করবে৷

স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ডিএসই চেয়ার‌ম্যান মো. ইউনুছুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এই সচেততামূলক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে৷ এই কর্মশালার বিষয়বস্তু অত্যন্ত সময়োপযোগী৷ সিকিউরিটিজ হাউজকে পরিচালনা করতে আইনকানুনগুলো কিভাবে প্রতিপালন করা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে আজকের এই আলোচনা৷ পুঁজিবাজারে প্রচুর আইনকানুন হয়েছে৷ আইনকানুন ঠিকমতো পরিপালন না করলে পুঁজিবাজারে সু-শাসন নিশ্চিত হবে না৷

তিনি বলেন, “বিএসইসি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে বিভিন্ন আইন-কানুন, বিধি-বিধান প্রণয়ন করে থাকেন, এই আইন-কানুন, বিধি বিধান পরিপালন আমাদের করতে হয়। পুঁজিবাজারের ইমেজ ট্রেকহোল্ডারদের উপর নির্ভর করে। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আপনাদের কাছে আসে। কমিশন এবং এক্সচেঞ্জের সাথে তাদের সরাসরি যোগাযোগ খুবই কম হয়। আপনারা যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে পারেন, তবে কমিশন এবং স্টক এক্সচেঞ্জ উভয়েই নিশ্চিত থাকতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, এখানে যারা উপস্থিত আছেন সকলেই আর্থিক খাতের লোক৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে আমরা অনেক উন্নতি করেছি৷ আর এ সময়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে আর্থিক খাত সম্পর্কে৷ আমাদের এগুলোকে কাটিয়ে উঠতে হবে৷ আমাদের পুঁজিবাজার ও বীমা খাত তুলনামূলকভাবে দূর্বল৷ আমাদের ব্যাংকিং খাত দূর্বল নয়৷ কিন্ত এটি বর্তমানে বিভিন্ন সমালোচনার মধ্যে রয়েছে৷ এগুলো থেকে উত্তোরনের জন্য অনেক কাজ করতে হবে৷

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে থাকলেও আর্থিক খাতে অনেক পিছিয়ে আছে৷ এই খাতের উন্নয়ন করতে না পারলে দেশের টেকসই উন্নয়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে৷ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিগত এক বছরে অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে৷ আমাদের বাজার মূলধন বেড়েছে, যা নিঃসন্দেহে উন্নয়নের নির্দেশক৷ কিন্ত সার্বিক পুঁজিবাজার নিয়ে গর্ব করার মত উচ্চতায় পৌঁছতে আরও সময় লাগবে৷ তাই আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে৷ আমাদের পুঁজিবাজারের মূল উন্নয়ন ১৯৯০ সালের পর থেকে শুরু হয়েছে৷ এ সময়ে আমরা প্রচুর আইন-কানুন করেছি৷ সে জায়গায় কোন ঘাটতি নেই৷ বর্তমান কমিশন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, গুড গর্ভনেন্স এবং ব্রান্ডিং এর বিষয়ে কাজ করছে৷ আমরা আশাবাদি এই কমিশনের নেতৃত্বে পুঁজিবাজার সামনের দিকে এগিয়ে যাবে৷

ডিএসইর কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমান ‘স্ট্রেংথেনিং দ্য সিকিউরিটিজ ফান্ড অ্যান্ড সিকিউরিটিজ অব ইনভেস্টর’ বিষয়ে পেপার উপস্থাপন করেন৷ এসময় তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পরামর্শে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডকে বিনিয়োগকারীদের তহবিল এবং সিকিউরিটিজের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ডিএসই’র সকল ট্রেকহোল্ডার, কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থ এবং সিকিউরিটিজ বাজারের উন্নয়নের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করে৷

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত