পরিবারের অভিভাবকদের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে যেসকল মেধাবী শিক্ষার্থী বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার গন্ডি না পেরুতেই ঝরে পড়ে যায়, মূলত তাদের পাশে দাঁড়াতেই স্বপ্নযাত্রার যাত্রা। ৫ম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের শতভাগ অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে থাকে এই সংগঠনটি। ২০১৯ সালে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল স্বপ্নযাত্রা। এই সংখ্যাটি বর্তমানে ১২৭ জন। স্বপ্নের বাস্তব রুপ দিতে ৮৫ জন ছেলে ও ৪২ জন মেয়ে স্বপ্নযাত্রার শতভাগ শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কাজ করছে স্বপ্নযাত্রা। দেশের ২৪টি জেলায় ৩৫টি স্কুল, ২টি মাদ্রাসা, ৩১টি কলেজ, ৩টি পলিটেকনিক ইন্সিটিটিউট, ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে তারা ’স্বপ্নযাত্রার’ শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করছে । এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩সালের এইচএসসি পরীক্ষায় স্বপ্নযাত্রার সহযোগিতা পাওয়া ১৯ জন অংশ গ্রহন করেন।
গতকাল বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে স্বপ্নযাত্রার সহযোগিতা পাওয়া ১৯ জন শিক্ষার্থীই পাস করেছেন। পাসের হার শতভাগ। এদের মাঝে ৪ জন গোল্ডেন এ প্লাস, ৪ জন এ প্লাস, ৮ জন এ, একজন এ মাইনাস এবং ২ জন বি পেয়েছেন। স্বপ্নযাত্রার সহযোগিতা পাওয়াদের শতভাগ পাসে খুশি ‘স্বপ্নযাত্রা’র পরিবারও।
স্বপ্নযাত্রার স্বপ্নজয়ী গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া জিয়াসমিন আক্তার বলেন, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আমাদের কাছে একপ্রকার আর্শিবাদ হয়ে ধরা দেয় স্বপ্নযাত্রা। তাদের সহযোগিতা না পেলে হয়তো আজকের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। ফলাফলটা আমার চেষ্ঠার ফল তবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে স্বপ্নযাত্রা যে ভুমিকা রেখেছে তা চিরদিন মনে থাকবে।
স্বপ্নযাত্রার আরেক স্বপ্নজয়ী গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া সায়াম আল হাসান লেন, আমার এই ফলাফলে আমার পরিবারের সবাই খুশি। সেই সাথে আমার আরেক পরিবার স্বপ্নযাত্রাকে খুশি করতে পেরেছি এটাও বড় পাওয়া। স্বপ্নযাত্রা যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি এই ভেবে আরও ভালো লাগছে। তিনি ধন্যবাদ জানান স্বপ্নযাত্রা পরিবারের সকলকে।
স্বপ্নযাত্রার উদ্যোক্তা আরিফ সিকদার বলেন, আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছলতার কারণে কেউ যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, মূলত তাদের সহযোগিতার উদ্দেশ্যেই স্বপ্নযাত্রার যাত্রা শুরু। আমরা চেষ্ঠা করছি মেধাবীদের শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ করে দিতে।
তিনি আরও বলেন, অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকের স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। অনেকেই শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ঝরে পরে। আবার স্বল্প শিক্ষিত হয়ে যোগ্যতার অভাবে ঘুরে বেড়া, বেছে নেয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। হতাশাগ্রস্থ হয়ে জড়িয়ে পড়ে অসামাজিক ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে। তাদের সর্বাত্বক উন্নয়নে অংশগ্রহন করাই স্বপ্নযাত্রার লক্ষ্য।
আরিফ সিকদারের মতে, ভালো কাজে সবাই এগিয়ে এলে তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আপনিও চাইলে এ কার্যক্রমের অংশীদার হতে পারেন।
উল্লেখ্য, ’স্বপ্নযাত্রা’ মূলত অস্বচ্ছলতার কারণে পিছিয়ে পরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে শতভাগ সহযোগিতা করে থাকে। পঞ্চম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত যে কোন দরিদ্র মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় মাসিক খরচ যেমন- সেশন ফি, মাসিক বেতন, পরীক্ষা ফি, বই, খাতা, পেন্সিল-কলম, জ্যামিতি বক্স, ইউনিফর্ম, স্কুল/কলেজ ব্যাগ, টিফিন, স্কুলে যাতায়াত, আবাসন ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে। এছাড়াও ঐচ্ছিক খাত হিসেবে শিক্ষা সফর, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কারিগরী প্রশিক্ষণ, চাকুরী সহায়তা, পারিবারিক সহায়তা, উৎসব গিফট, বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় পরামর্শ সহায়তা প্রদান করে।