রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) এফবিসিসিআই আয়োজিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন থাকতে হবে। পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে খুচরা, পাইকারি বাজার এবং আড়ৎ পর্যায়ে পণ্য কেনা-বেচায় রশিদ (ইনভয়েস) দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ব্যবসা করতে হবে। বিগত সময়ে ব্যবসায়ীদের প্রতি সাধারণ মানুষের যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে তা দূর করতে হবে।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রমজানের নিত্য পণ্য আমদানিতে এলসি সহজীকরণের জন্য এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি কাজ করা হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না তা তদারকি করছে কমিটির সদস্যরা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব আছে বলে মন্তব্য করেন সভাপতি।
এসময় চাল, গম ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন করে সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখার জন্য কৃষক ও খামারিদের ধন্যবাদ জানান তিনি। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদেরও ধন্যবাদ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সারাবিশ্বে যেখানে উৎসব পার্বণ এলে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমিয়ে দেন, সেখানে আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন। উৎসবে পণ্যের দাম বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হলে ব্যবসায়ীদের অসাধু তকমা দেওয়া হয়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে বিক্রয়ের পাকা রশিদ বা ভাউচার থাকা আবশ্যক।
দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে বেসরকারি খাতের বিরাট ভূমিকার কথা উল্লেখ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানি, মজুদ ইত্যাদি নিয়ে বাজারে যে অভিযান আমরা করি, সেগুলো করতে চাইনা আমরা। ব্যবসায়ীরাই নিজেরা সামাধান করতে পারে এগুলো।
সভায় আসন্ন রমজান মাসে বাজারে ভোজ্যতেলের কোনও সংকট হবে না বলে জানান পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা।
তেল ছাড়াও আসন্ন রোজাকে ঘিরে বাজারে চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুরসহ অন্যান্য পণ্যের সংকট সৃষ্টি হবে না বলে আশ্বাস দেন মিলমালিক, পাইকারসহ বাজার সমিতিগুলো।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, রেজাউল করিম রেজনু, এমজিআর নাসির মজুমদার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান (টিটো), আবু মোতালেব, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, আমজাদ হোসেন, আক্কাস মাহমুদ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ অয়েল মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিটিগ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা, মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার তসলিম শাহরিয়ার, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন প্রমুখ।