২০২২ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আট বছরের মধ্যে প্রথম ১০০ ডলারের গণ্ডি স্পর্শ করে। ওই বছর বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠে। ঠিক একই সময় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাপক ঝুঁকির মুখে পড়ে। ফলে শক্তিশালী হয়ে ওঠে পণ্যটির চাহিদা প্রবৃদ্ধির গতি।
জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কঠোর নীতি গ্রহণ করে। উন্নত দেশগুলোয় রেকর্ড মাত্রায় বাড়ানো হয় সুদহার। এতে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রকট হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা। নিম্নমুখী হতে শুরু করে জ্বালানি তেলের বাজার। তার ওপর চীনে জিরো কভিড নীতির কারণে দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা তলানিতে নেমে আসে। বছরের শেষে এসে আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম গড়ে ৮৬ ডলারে নেমে আসে।
ওপেক জানায়, এ বছর বাজার আবারো ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরবে। এতে জোটের সদস্য দেশগুলোর আয় বাড়বে, যা উত্তোলন বাড়াতে সহায়তা করবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আবারো জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের গণ্ডি পার করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে পড়বে অনেক দেশ।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওপেক ও এর মিত্র জোট ওপেক প্লাস গত বছরের অক্টোবরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা বৈশ্বিক চাহিদা ২ শতাংশের সমপরিমাণ। এখনো একই নীতিতে অটল জোটটি।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে গত বছর ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পরই পণ্যটির দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয় ১৪৭ ডলারে। তবে বছরের শেষ দিকে এসে তা ৮০ ডলারের নেমে যায়। চলতি বছর দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে আগামী মাস থেকে রাশিয়া উত্তোলন কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিলে ৮৬ ডলারে উঠে আসে প্রতি ব্যারেলের বাজারদর।
মার্চ থেকে দৈনিক তেল উত্তোলন পাঁচ লাখ ব্যারেল কমিয়ে দেবে মস্কো। রাশিয়ার তেলের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা ও জি৭-এর দেয়া প্রাইস ক্যাপের প্রতিক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে পুতিন প্রশাসন। রাশিয়া তেল উত্তোলন কমিয়ে দিলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দামে আবারো অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরও গত বছর দেশটির তেল উত্তোলন বেড়েছে। কারণ দেশটির তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে উঠেছে ভারত ও চীন। গত বছর ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টন তেল উত্তোলন করে রাশিয়া।