প্রায় দুই বছর আগে তৈরি করা এই ডিপিপির বিপরীতে সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছিল ৪৫০ কোটি টাকা। সেই ডিপিপি সংশোধন করে টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৮৭ কোটি। মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই বেড়ে যায় ১৩৭ কোটি টাকা।
এই প্রকল্প নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বাফুফের সমন্বয়ে গঠিত ‘প্রকল্প যাচাই কমিটির’ সুপারিক্রমে ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্প সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছিল। মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এখন তাদের পেছনে ব্যয় বাড়ানো উচিত-এই যুক্তিতে কমিটি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করে।
ওই ৫৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প পাসের অপেক্ষা করে করে এখন হতাশ বাফুফে কর্মকর্তারা। ওই প্রজেক্ট পাস হবে কিনা সে নিশ্চয়তাও পাচ্ছেন না তারা। বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘যখন আমি ডিপিপি পাঠালাম তখন ইতিবাচক বিশ্বাস নিয়ে বসেছিলাম যে, ওটা হবেই। যে কোনো কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ওটা পড়ে রয়েছে। এটা আমি বের করতে পারছি না। পাবো তার নিশ্চয়তাও পাচ্ছি না। এক-দুই বছর ধরে আমরা ডিপিপি তৈরি করেছি। ফুটবলের উন্নয়নের জন্য যা যা দরকার, সব ওখানে আছে। আমরা সেটা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি। তারা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।’
প্রকল্প বাজেট বেড়ে ৫৮৭ কোটি টাকা হওয়া প্রসঙ্গে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, ‘প্রথম যখন ডিপিপি তৈরি করা হয় তখন এ প্রকল্পে একাডেমি ছিল তিনটি। সংশোধিত ডিপিপিতে একাডেমি চারটি। দুটি ছেলেদের ও দুটি মেয়েদের। মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাদের উন্নয়নে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনা হয় কমিটিতে। কমিটির সুপারিশেই ১৩৭ কোটি টাকা বেড়েছে এই প্রকল্পে।’
কী আছে ৫৮৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পে? এই প্রকল্পের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা হবে একাডেমিতে। প্রথমে ছেলেদের দুটি ও মেয়েদের একটি একাডেমি তৈরি পরিকল্পনা ছিল বাফুফের। সংশোধিত ডিপিপিতে ছেলে ও মেয়েদের একাডেমি দুটি করে। এর মধ্যে কমলাপুরে চলমান বাফুফের এলিট একাডেমি ও বাফুফে ভবনে চলমান মেয়েদের একাডেমিও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। নতুন দুটি একাডেমির জন্য স্থান ঠিক করা হয়েছে রাজশাহী ও গোপালগঞ্জে। এর মধ্যে রাজশাহীতে হবে মেয়েদের একাডেমি, গোপালগঞ্জে ছেলেদের।
একাডেমি কোথায় হবে তা যাচাই-বাছাই করতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বাফুফের কর্মকর্তারা সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে একাডেমি তৈরি জন্য রাজশাহী ও গোপালগঞ্জ নির্ধারণ করা হয়।
প্রকল্প পাস হলেই একাডেমি তৈরির কাজ শুরু করবে বাফুফে। পাস হওয়া প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তা ঠিক করবে দুটি কমিটি। একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এবং অন্যটি প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি)।
বাফুফের এই প্রকল্প ৫ বছরের জন্য। দিন গণনা শুরু হবে প্রকল্প পাস হওয়ার দিন থেকে। একাডেমি থেকে যদি ইতিবাচক ফল আসে, তাহলে প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিতকরণের উদ্যোগ নেবে বাফুফে। প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত না হলে ভবনে মেয়েদের ও কমলাপুরে ছেলেদের একাডেমি নিজেদের উদ্যোগে চালিয়ে নেবে বাফুফে।
নতুন দুটি একাডেমির জন্য নির্ধারিত জায়গা প্রসঙ্গে বাফুফের সহকারী ম্যানেজার (প্রকল্প) মো. তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘চারটি ভেন্যু পরিদর্শন করে রাজশাহী ও গোপালগঞ্জকে একাডেমির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজশাহীর মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ডরমেটরি নির্ধারণ করা হয়েছে মেয়েদের নতুন একাডেমির জন্য, ছেলেদের নতুন একাডেমির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামের ডরমেটরি। প্রকল্প পাস হলে স্থান দুটি খেলোয়াড় ওঠানোর মতো করে তৈরির কাজ শুরু হবে।’
৫৮৭ কোটি টাকা প্রকল্পের চারটি একাডেমির জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩৫৭ কোটি টাকা। অন্যান্য খরচের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনে ৯৭ কোটি টাকা, ছেলে ও মেয়েদের কোচিং স্টাফের বেতন বাবদ ৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্প পাস না হলেও একাডেমিগুলোকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণ করে রেখেছে বাফুফে। নতুন দুই (ছেলে ও মেয়ে) একাডেমি হবে ৬০ জনের। এর মধ্যে ৫০ জন ফুটবলার এবং কোচ ও অন্যান্য স্টাফ মিলিয়ে ১০ জন। বাফুফে কেন্দ্রীয়ভাবে খেলোয়াড় বাছাই করেই একাডেমিতে ওঠাবে।
এটি পাস হলে সেটা হবে দেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, ‘এই প্রকল্পের প্রধান ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে-পুরুষ ও নারী জাতীয় ফুটবল দল, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ। কেবল রাজধানীর ফুটবলই নয়, জেলার ফুটবল উন্নয়নের বিষয়টিও আছে এখানে। এই প্রকল্পের অর্থ বেশি ব্যবহার হবে ফুটবলের কাঠামো শক্তিশালী করতে।’