বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ খাতে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি। একই সঙ্গে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে। টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীন একযোগে অর্ধশতাধিক শহরে ফাইভজি চালু করেছে। এরই অংশ হিসেবে দেশটিতে ফাইভজি ফোনের চাহিদা বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন ডিভাইস ব্র্যান্ড গত বছরের শেষ মাসে চীনে ৩৫টি মডেলের নতুন স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। একই সময় দেশটিতে সরবরাহকৃত মোট স্মার্টফোনের মধ্যে ৫৪ লাখ ১৪ হাজার ইউনিট ফাইভজি স্মার্টফোন ছিল। এছাড়া গত ডিসেম্বরে চীনের ব্র্যান্ডগুলো আরো ১১টি নতুন ফাইভজি ফোন উন্মোচনের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। সামগ্রিকভাবে গত বছর দেশটিতে স্মার্টফোন সরবরাহ ৩৮ কোটি ৯০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে এবং বছরজুড়ে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন বিক্রি ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ইউনিটে পৌঁছেছে।
বিভিন্ন বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বৈশ্বিক ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারে নেতৃত্ব দেবে চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে। বাজারটিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকবে যথাক্রমে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ও দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং।
চায়না ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি একাডেমির প্রতিবেদনে চীনে পাওয়া যাচ্ছে এমন ফাইভজি স্মার্টফোন সিরিজের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো জিটিই অ্যাক্সন ১০ প্রো ফাইভজি, হুয়াওয়ে মেট ২০এক্স ফাইভজি, হুয়াওয়ে মেট ৩০ সিরিজ, হুয়াওয়ে মেট এক্স (ফোল্ডিং), অনার ভি৩০ সিরিজ, চায়না মোবাইল পাইওনিয়ার এক্স১, ভিভো আইকিউওও প্রো ফাইভজি, ভিভো নেক্স৩ ফাইভজি, স্যামসাং নোট ১০ প্লাস ফাইভজি, শাওমি মি৯ প্রো ফাইভজি, হুয়াওয়ে নোভা ৬ ও অপো রেনো৩ প্রো ইত্যাদি।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) এর আগে জানিয়েছিল, চলতি বছর চীনের স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর ডিভাইস সরবরাহে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে, যা গত বছরের চেয়ে দশমিক ৭ শতাংশ বেশি হতে পারে। এছাড়া চলতি বছর দেশটিতে ফাইভজি স্মার্টফোন সরবরাহে গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।
‘চায়না মোবাইল ২০২০ টার্মিনাল প্রডাক্ট প্ল্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর চীনের ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারের আকার ১৫ কোটি ইউনিটে পৌঁছবে। এছাড়া চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ফাইভজি ফোনের দাম এখনকার চেয়ে এক-দেড় হাজার ইউয়ান কমবে।
বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টেলিযোগাযোগ বাজারে ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের দিক থেকে ফোরজির চেয়ে ফাইভজির বিস্তার দ্রুত হচ্ছে। উন্নত ও দ্রুতগতির এ নেটওয়ার্ক সেবা ব্যবহারে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন প্রয়োজন। যে কারণে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে ফাইভজি ফোনের চাহিদা বৃদ্ধি সামগ্রিক স্মার্টফোন বাজারের মন্দা ভাব কাটিয়ে উঠতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
বিশ্বজুড়ে ফাইভজির পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরুর লক্ষ্যে কার্যক্রম জোরদার করেছে সেলফোন অপারেটরগুলো। এ মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকেও ফোরজির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া ফাইভজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির ফলে সেলফোন অপারেটরগুলোর আয়ের নতুন পথ উন্মোচন হবে। ফলে টেলিযোগাযোগ সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে।
আইএইচএস মার্কিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈশ্বিক বাজারে যতসংখ্যক ইউনিট ফাইভজি ফোন বিক্রি হয়েছে, তার তিন-চতুর্থাংশই স্যামসাং ব্র্যান্ডের ছিল। অর্থাৎ বৈশ্বিক ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারে গত বছর আধিপত্য ধরে রেখেছিল স্যামসাং। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির ফাইভজি স্মার্টফোন সরবরাহ ৩২ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা প্রান্তিকটিতে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ হওয়া মোট ৪৩ লাখ ফাইভজি স্মার্টফোনের ৭৪ শতাংশ।
গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) স্যামসাংয়ের ফাইভজি স্মার্টফোন সরবরাহ ১৫ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছিল, যা তৃতীয় প্রান্তিকে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বৈশ্বিক ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারের ৮৩ শতাংশই ছিল স্যামসাংয়ের দখলে।