যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সি আর দত্ত মারা গেছেন। বাংলাদেশের সময় আজ সকাল ৯টায় তিনি মারা গেছেন। তার বয়স ৯৩ বছর হওয়ায় তার নানান দুরারোগ্য রোগ ছিল। তিনি আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। তার মেয়ের বাসায় ছিলেন। মেয়ের নাম কবিতা দাশগুপ্ত। ওখানে হঠাৎ করে গত শুক্রবার তিনি বাথরুমে পড়ে যান। পড়ে গিয়ে পায়ে ফ্র্যাকচার হয়েছিল। তখন তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। ওই অবস্থায় তাকে ফ্লোরিডার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পরপরই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। গতকালকে তার মেয়ে ওখান থেকে ফোন করে জানায়, গতকাল রাত ৯টার দিকে তিনি ভেন্টিলেশনে আছেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক। কিছুক্ষণ আগে খবর পেলাম যে, তিনি মারা গেছেন।’
সি আর দত্তের জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে। তার পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। চিত্তরঞ্জন দত্ত ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিছুদিন পর ‘সেকেন্ড লেফটেনেন্ট’ পদে কমিশন পান। ১৯৬৫ সালে সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে লড়েন তিনি৷ ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে আসালং এ একটা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি। এই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে পুরস্কৃত করে।
মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা অনেক। ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেব দায়িত্ব দেয়া হয় এম.এ.জি ওসমানীকে। তিনি বাংলাদশেকে মোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন। সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়স্তাগঞ্জ রেল লাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে ৪নং সেক্টর গঠন করা হয় এবং এই সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন তিনি।
সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটের রশীদপুরে প্রথমে ক্যাম্প বানান চিত্তরঞ্জন দত্ত। চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চা বাগান। চা বাগানের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে তিনি যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করে দিতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যুদ্ধের আক্রমণের সুবিধার্থে রশীদপুর ছেড়ে মৌলভীবাজারে ক্যাম্প স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমানে বিজিবি) প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে সরকার।