সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মূলত বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে মনোপলি ব্যবসার সুযোগ দিতে একটি সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সোনা চোরাচালান আর নিরাপত্তার অজুহাত বড় ধরনের যুক্তি হতে পারে না। এটা হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেওয়ার কথা। এই রুটেও প্রায় প্রতিদিন ছোটবড় সোনা চোরাচালান হচ্ছে।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমান প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর লিখিত নির্দেশে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে মার্চ থেকে ফের টিকিট বিক্রি শুরু করলেও সিভিল এভিয়েশনের নির্দেশনা না থাকায় এখনো যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন না। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিমানকে জানিয়েছে, এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নির্দেশনা লাগবে।
এ অবস্থায় দুই আন্তর্জাতিক রুটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহণ শুরুসহ উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা নিতে ছয়টি বিষয়ে সুপারিশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ২৯ জানুয়ারি বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে তিনি এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ও সিইও এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন বিমান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল আউয়াল।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমান ভাড়া, যাত্রী দুর্ভোগ, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এতে একদিকে যেমন মালামাল পরিবহণ ও যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বিদেশিদের কাছে। ভুক্তভোগীদের একের পর এক অভিযোগের ভিত্তিতে নাখোশও পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে বিমানের সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে (সিলেট ও চট্টগ্রাম) ডমেস্টিক প্যাসেঞ্জার পরিবহণ বন্ধ আছে। এ কারণে সিলেট থেকে ঢাকা রুটে টিকিটের যেমন সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনই যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্য। বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসতে খরচ হয় আনুমানিক ৮০০ পাউন্ড, যেখানে লন্ডন থেকে সিলেট আসতে খরচ হয় এক হাজার পাউন্ড। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব কম হলেও যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে লন্ডন থেকে সিলেট আসতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে দূরত্ব বিবেচনায় ভাড়ার বৈষম্য দূর করতে পারলে যাত্রীরা সরাসরি সিলেট পর্যন্ত অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়াও বেশির ভাগ প্যাসেঞ্জার সিলেট নেমে গেলেও ডমেস্টিক যাত্রীদের পরিবহণ না করায় বিমান একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ যাত্রীরা টিকিট সংকটের কারণে চড়া মূল্যে বেসরকারি বিমানের টিকিট সংগ্রহ করছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন সিলেট বিভাগের ৪টি জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক যাত্রী অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটে যাতায়াত করে থাকেন। এই যাত্রীদের আগমন এবং গমনের সময় তাদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অনেকে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকেন। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং আশপাশে অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষমাণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্নতমানের কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত অপেক্ষমাণ কক্ষ নেই। এতে যাত্রীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অচিরেই এখানে উন্নতমানের আধুনিক সুবিধাসংবলিত অপেক্ষমাণ কক্ষ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সিলেটে এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছে। সিভিল এভিয়েশন ও বিমান কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সের ভেলিডেশন সম্পন্ন হয়েছে। ফলে সিলেট এবং আশপাশের জেলা থেকে বহির্বিশ্বে সবজি রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে পচনশীল পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে ঢাকার শ্যামপুরে যেমন পচনশীল পণ্য প্যাকেজিং হাউজ রয়েছে, অনুরূপভাবে সিলেটেও পচনশীল পণ্য প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণ করা হলে সিলেট এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে এসব পণ্য রপ্তানির নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গোতে মালামাল রপ্তানি করা গেলেও তা সরাসরি আমদানি করা যাচ্ছে না। আমদানীকৃত পণ্য ঢাকায় এসে পরে সিলেট যাচ্ছে। সিলেটে কার্গো হ্যান্ডলিং ভবনসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকায় সরাসরি লন্ডন থেকে সিলেটে কার্গো ইমপোর্ট চালু করা প্রয়োজন। যদিও এর আগেও এই সেবা চালু ছিল।
চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু রয়েছে। কিন্তু সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকা সত্ত্বেও লন্ডন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিলেটে আসে না। অতীতে ফ্লাই দুবাই সরাসরি সিলেটে চলাচল করলেও বর্তমানে তা বন্ধ। পুনরায় এই ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করা হলে রাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে এবং যাত্রীরাও বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।