বাজার বিশ্লেষক ও গবেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)সহ অন্যদের কারখানা স্থাপনে উৎসাহী করতে পারে তাহলে বিশ্বে স্মার্টফোনের গড় মূল্য বাড়বে। এর পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেতনভাতা। এশিয়ার দেশগুলোয় চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় খুব বেশি ছিল না। যে কারণে স্মার্টফোন বাজারজাতে তেমন প্রভাব পড়েনি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এ খাতে ব্যয় বাড়বে।
বিশ্বের অন্যতম চুক্তিভিত্তিক চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি বিনিয়োগকারীদের জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে চিপ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করলে তাইওয়ানে থাকা কারখানার তুলনায় ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। প্রযুক্তি খাতে চীনকে পেছনে ফেলতে ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে চিপস অ্যাক্ট পাস করেছে। এর আওতায় উৎপাদনকারীদের কারখানা স্থাপনে আর্থিক সহায়তা করা হবে। ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পের মাধ্যমে ফাউন্ড্রি স্থাপনে সহায়তা করা হলেও চিপের দাম কমাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
কারখানা স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ ভূরাজনীতির পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতে চীনের সঙ্গে বিরোধ তৈরি করবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে অ্যাপল, স্যামসাং, গুগলসহ বাজারে থাকা অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (ওইএম) প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্মার্টফোনের দাম বাড়ার বিষয়ে আইফোন ১৪ প্লাসের একটি উদাহরণ দেয়া যায়। এর মোট ৫২৭ ডলার মূল্যের ৫৪ শতাংশই উৎপাদন সম্পর্কিত। এর মধ্যে সেমিকন্ডাক্টরেই ব্যয় বেশি। এ১৫ প্রসেসরের জন্যই ৮১ ডলার ব্যয় হবে। কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট চিপের ডিজাইন করলেও টিএসএমসি চিপসেটটি তৈরি করে থাকে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন চিপ তৈরি করে থাকে। এ উদ্যোগের কারণে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বাজারজাত প্রভাবিত হবে।
অন্যদিকে সম্প্রতি চীনে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ রফতানিতে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে বাইডেন প্রশাসন। অবগত সূত্রের বরাতে সম্প্রতি ব্লুমবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এরই মধ্যে দেশটির কোম্পানিগুলোকে পরিকল্পনার বিষয়ে জানিয়েছে। সে সঙ্গে আগামী মাসের মধ্যে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, নেদারল্যান্ডস ও জাপানের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রযুক্তি খাতে যখন চীনের সামনে পাহাড়সমান বাধা তখন নেদারল্যান্ডসের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এএসএমএল নতুন অভিযোগ জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, সাবেক চীনা কর্মী তাদের প্রযুক্তিবিষয়ক তথ্য চুরি করেছে। ডাচ কোম্পানিটি লঙ্ঘনের বিষয়ে নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবহিত করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে এএসএমএলের মতে, যে তথ্য চুরি হয়েছে তা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বা ব্যবসায় কোনো ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এএসএমএল জানায়, আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তিবিষয়ক তথ্যের অননুমোদিত অপব্যবহার ঘটেছে এবং এর সঙ্গে চীনের একজন সাবেক কর্মী জড়িত। এ নিরাপত্তা লঙ্ঘনের কারণে রফতানি নিয়ন্ত্রণ বিধিমালার লঙ্ঘন হয়ে থাকতে পারে।