ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে অভিযোগ জমা পড়েছিল ২৫ হাজার ৩৪৬টি। এর আগের অর্থবছরে জমা হয়েছিল ১৪ হাজার ৯১০টি অভিযোগ। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংখ্যাটি ছিল ৬ হাজার ১৪০। অর্থাৎ ছয় বছরে সেবা বা পণ্য কিনে প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিদের প্রতিকার চাওয়া বেড়েছে চার গুণের বেশি।
‘জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। সুতরাং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিষয়টি মৌলিক অধিকারের মতোই। সরকার ভোক্তাদের ক্ষমতায়ন না করে উল্টো জ্বালানির দাম নির্ধারণে ভোক্তার যে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল, সেটা আইনের মাধ্যমে পরিবর্তন করেছে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালে। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারি সংস্থাটিতে ভোক্তাদের মোট অভিযোগ পড়েছিল মাত্র ১ হাজার ১০৫টি। ব্যাপক প্রচার–প্রচারণার ফলে পরবর্তী ২০১৬-১৭ অর্থবছরেই অভিযোগের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
দেশের ই-কমার্স খাতে অস্থিরতার কারণে গত ২০২০-২১ ও ২০২১–২২ অর্থবছরে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও সেই ধারাবাহিকতা রয়েছে। এ অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই–ফেব্রুয়ারিতে অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৮। এসব অভিযোগের বড় অংশই অনলাইন কেনাকাটা–সংক্রান্ত।
আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে অনলাইন কেনাকাটা–সংক্রান্ত অভিযোগগুলো নিষ্পত্তিতে সরকারি সংস্থাটি হিমশিম খাচ্ছে। যেমন সর্বশেষ অর্থবছরে জমা পড়া ২৫ হাজার ৩৪৬টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র তিন হাজারের মতো। নিষ্পত্তি না হওয়া অভিযোগ আছে ২২ হাজারের ওপরে। অবশ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসের সাড়ে ১৫ হাজার অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজারের বেশি।
সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরের ৩০ হাজার অনিষ্পন্ন অভিযোগের মধ্যে ই-কমার্স বা অনলাইনে কেনাকাটা–সংক্রান্ত অভিযোগ ১৬ হাজারের ওপর।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন ভোক্তা আইন করা হয়, তখন ই-কমার্স খাতের অস্তিত্ব সেভাবে ছিল না। এ জন্য বিদ্যমান আইনে অনলাইন কেনাকাটা–সংক্রান্ত সব প্রতারণার বিষয়ে সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই নতুন আইনে শাস্তির বিষয়টি আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।’
তবে শুধু আইনের সীমাবদ্ধতার কারণেই যে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সমস্যা হচ্ছে, তা নয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিতে পর্যাপ্ত জনবলেরও সংকট রয়েছে। এমনকি এখনো সব জেলায় একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারেনি ভোক্তা অধিদপ্তর। বর্তমানে সংস্থাটিতে মঞ্জুরি করা ৩৬৬ পদের বিপরীতে সারা দেশে জনবল আছে ১৮২। অর্থাৎ সংস্থাটিতে বর্তমানে অর্ধেক পদই শূন্য।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, শুধু অভিযোগ নিষ্পত্তিকেই গুরুত্ব না দিয়ে সামগ্রিকভাবে সুশাসন ও ন্যায়প্রতিষ্ঠা এবং আর্থিক সমতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে দেশে আজ বুধবার বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘নিরাপদ জ্বালানি, ভোক্তাবান্ধব পৃথিবী’।
ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। সুতরাং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিষয়টি মৌলিক অধিকারের মতোই। সরকার ভোক্তাদের ক্ষমতায়ন না করে উল্টো জ্বালানির দাম নির্ধারণে ভোক্তার যে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল, সেটা আইনের মাধ্যমে পরিবর্তন করেছে।’