সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বেক্সিমকো পঞ্চগড়ে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হারুনুর রশিদ ওরফে হারুন প্রধান ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে এই জমি কেনা হয়। হারুন প্রধান বাস্তবে জমি না কিনে জাল দলিল দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বেক্সিমকো থেকে ওই টাকা হাতিয়ে নেয়।
বেক্সিমকো লিমিটেড ক্রয়কৃত জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বললে হারুনুর রশীদ কোম্পানিটির সাথে টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। বেক্সিমকো লিমিটেড তাদের কোম্পানির সাথে প্রতারণা ও টাকা উদ্ধারে প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকায় ধানমন্ডি থানায় ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি মডেল থানায় বাবর মিয়াকে (৬০) প্রধান ও হারুন অর রশিদ প্রধানকে (৫৫) দ্বিতীয় করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। মামলাটি করেন বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড এর ডেপুটি ম্যানেজার আল মামুন।
বেক্সিমকো লিমিটেড পঞ্চগড়ে সৌর বিদ্যুতের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। শেয়ারবাজারে সুকুক নামের ইসলামী বন্ড ইস্যু করে সংগৃহীত তিন হাজার কোটি টাকার একটি অংশ এই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হচ্ছে। একটি প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও অংশগ্রহণ রয়েছে। দুটি প্রজেক্টের মধ্যে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেডের ৪৬ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা আত্নসাৎ করায় মামলার দ্বিতীয় আসামী হারুন অর রশিদ প্রধান ওরফে হারুন প্রধানকে পঞ্চগড় থেকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
মামলার খবরে হারুণ প্রধানসহ সকল আসামী আত্মগোপনে চলে যান। তখন থেকে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান পরিচলানা করছে। এর মাঝে মামলার দ্বিতীয় আসামী হারুন প্রধানকে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকার ডিবি পুলিশ পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়ন থেকে আটক করে।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনি জানান, আটকের পর তেঁতুলিয়া মডেল থানায় অবগত করে তাকে ঢাকায় নিয়েছে ডিবি পুলিশ। এজাহার ভুক্ত আসামী হারুন অর রশিদ প্রধান জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের সাতমেড়া বাসামোড় এলাকার মৃত গফুর উদ্দীন প্রধানের ছেলে।
একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হারুন প্রধানসহ অপর অভিযুক্তরা ১১৫ একর ২৪ শতাংশ জমি বিভিন্ন ভূয়া ও জাল জালিয়াত দলিলের মাধ্যমে কোম্পানীর নামে ক্রয়ের কথা বলে ওসমান কায়সার চৌধুরী এবং বিভিন্ন মানুষের নামে ১১৪ টি ভূয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এবং করতোয়া সোলার লিমিটেড এর নামে ৩১ টি ভূয়া সাব-কবলা দলিলের রেজিস্ট্রি দেখিয়ে, ১৬.০০ একর জমি কোম্পানীকে বুঝিয়ে দেয়। প্রতারণামূলকভাবে তারা তাদের নামে বেনামে এবং তাদের বিভিন্ন কোম্পানী ও ফার্মের নামে বাদীর সংশ্লিষ্ট কোম্পানী থেকে ৪৬ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে। অপর আসামীদের আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ২য় প্রকল্পের জন্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক বিনিয়োগ বিদেশ থেকে হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতা এর জন্যে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ কারীদের নিকট বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় সরাসরি ২য় প্রকল্পের নামে কোনো প্রকার মামলা করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদেশী প্রকল্পের পক্ষে বেক্সিমকো আলাদা মামলার কথা ভাবছে। সেই প্রকল্পের স্বার্থে স্থানীয় প্রতারক হারুন প্রধান সহ তার সহযোগী, দলবল ও ভুয়া দলিল তৈরী, রেজিস্ট্রি কাজে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগে মোট ১৯২ টি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি মামলা করা হয়েছে। বাকি ১৯১ টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্থানীয়দের পক্ষ থেকেও ভয়-ভীতি দেখানো, জমি জবর দখল ও প্রতারনাসহ নানা অভিযোগে হারুন প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এই বিষয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের গণসংযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট পিআর বলেন, বেক্সিমকোর পঞ্চগড়ে জমি কেনা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। কোম্পানির কাছে বিষয়টি ধরা পড়ার পরপরই তারা আইনের শরনাপন্ন হয়েছেন। ইতোমধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইন অনুসারে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে। তারা কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অর্থসংবাদ/এসএম