সম্প্রতি বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানা গেছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করছে কমিশন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আস্থার সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটানো এবং তারল্য প্রবাহ বাড়াতে সিএমএসএফ-এর অলস অর্থকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এখান থেকে বড় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংককে ঋণ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে গত কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই আদেশের মাধ্যমে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে প্রতিবছরই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দেয়। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর্যন্ত যেসব বিনিয়োগকারী লভ্যাংশের টাকা নেননি অথবা মালিক খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেসব অর্থ দিয়ে স্ট্যাবিলাইজেশন তহবিল গঠন করা হয়। সংক্ষেপে এই তহবিলকে সিএমএসএফ বলা হয়। বর্তমানে এই তহবিল বাজার উন্নয়নে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে কমিশন।
জানা গেছে, সিএমএসএফ-এর তহবিলে এ পর্যন্ত ৭০০ কোটি টাকা জমা হয়েছে। সেখান থেকে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে বাজারে কিছুটা বিনিয়োগ হয়েছে। বাকি প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংকে এফডিআর করা আছে। শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট কাটাতে এই টাকা থেকে ৩০০ কোটি টাকার মতো ঋণ দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, যেসব ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, তারাই কেবল ঋণ পাবে। এই ঋণে ৬ মাস থেকে এক বছর গ্রেস পিরিয়ড (এই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে না) ধরা হতে পারে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকার মতো পাবে। হাউজগুলোকে নিজস্ব তহবিল থেকে আরও ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। তবে ঋণ পাওয়ার জন্য যেসব ব্রোকারেজ হাউজের মালিকপক্ষের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে, ওইসব কোম্পানি থেকে গ্যারান্টি দিতে হবে। এছাড়াও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যারান্টি দিতে হবে। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নেবে, তাদের ঋণের টাকা অবশ্যই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ শক্তিশালী মৌলভিত্তির বাইরে দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে না।
কমিশন মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে। কারণ, ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে সাইট লাইনে বসে আছেন। তারা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। কিন্তু ঋণের টাকা বিনিয়োগ শুরু হলে ওইসব বিনিয়োগকারী বাজারে আসবে। এতে বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে এবং মন্দা অবস্থা কেটে যাবে। এভাবে লেনদেন ও সূচক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লে ফ্লোর প্রাইস (নিম্নসীমা) তুলে দেওয়ার কথা ভাববে কমিশন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দর) দিয়ে কৃত্রিমভাবে বাজার ধরে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের ভেতরেও রক্তক্ষরণ চলছে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন থেকে শেয়ারবাজার নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে। কারণ বাজারে টানা মন্দা চলছে। এজন্য বাজারের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসাবে বিশেষ তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে।